বৃহস্পতিবার, ১ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
নির্মাণ ব্যয় ৩৫০ কোটি, সংস্কারে খরচ ২০০ কোটি টাকা

শত বছরের গ্যারান্টির বাঁধে ২০ বছরে সাতবার ধস

আবদুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

শত বছরের গ্যারান্টির বাঁধে ২০ বছরে সাতবার ধস

শত বছরের গ্যারান্টি দিয়ে ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষায় আড়াই কিলোমিটার বাঁধ। কিন্তু মাত্র ২০ বছরে সাতবার ধস নেমেছে এ বাঁধে। এ ধস মেরামত ও বাঁধটি সুরক্ষায় ২০ বছরে ব্যয় হয়েছে আরও অন্তত ২০০ কোটি টাকা। সবশেষে গত মঙ্গলবার বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার বিলীন হয়ে গেছে। বারবার বাঁধে ধস নামায় শহরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শত শত কোটি কোটি ব্যয়ে নির্মাণের পরই বাঁধে ধস নামায় কাজের মান ও পাউবোর তদারকি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন জেলাবাসী।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণকালীন সময় ১৯৯৬-২০০১ সালে সিরাজগঞ্জ শহরের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষায় প্রায় আড়াই কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ব্রিটিশ পরামর্শক ফার্মের কারিগরি সহায়তায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি কোম্পানি বাঁধটি নির্মাণ করে। ব্যয় ধরা হয় সাড়ে তিন শ কোটি টাকা। স্থায়িত্বকাল হিসেবে শত বছরের গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছিল। বাঁধটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতি বছর প্রায় ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। নির্মাণের ৯ বছরের মাথায় ২০০৯ সালের ১০ জুলাই প্রথম বাঁধে ধস নামে। এরপর একই বছরের ১৭ জুলাই দ্বিতীয় দফা, ২০১০ সালের ১৬ জুলাই তৃতীয়, ২০১১ সালের ১৮ জুলাই চতুর্থ, ২০১৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পঞ্চম, ২০১৪ সালের ১০ জানুয়ারি ষষ্ঠ এবং সবশেষ মঙ্গলবার সপ্তম বারের মতো শহররক্ষা বাঁধটিতে ধস নামল। দফায় দফায় ধসে যাওয়া বাঁধ প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয়। তাছাড়া যেন আর ধস সৃষ্টি না হয় এ জন্য ২০১৪ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পাথর এবং জিওব্যাগ ফেলানো হয়। সংস্কার ও সুরক্ষার জন্য ২০ বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ের পর বাঁধটিতে আবার ধস নামায় স্থানীয়দের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা কমিটির নেতা নবকুমার বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলা ও গাফিলতির কারণেই বারবার বাঁধে ধস নামছে। প্রতিদিন আড়াই কিলোমিটার এলাকা সার্ভের মাধ্যমে লিকেজ বা ত্রুটি শনাক্তের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকলেও পাউবো তা করেন না। যে কারণে লিকেজ হলেও তারা টের না পাওয়ায় বারবার ধসের ঘটনা ঘটছে। সিরাজগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, বাঁধটি প্রতিনিয়ত সার্ভে করা হচ্ছে। সবশেষ ভাঙনের আগের দিনেও সার্ভে করা হয়েছিল কিন্তু কোনো ত্রুটি ধরা পড়েনি। গত মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ নদীতে ঘূর্ণাবর্তন শুরু হয় এবং প্রায় ১০০ মিটার এলাকা ধসে যায়। জরুরিভাবে কাজ করে ভাঙন নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। পাউবোর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের (রাজশাহী) চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম শফিকুল হক জানান, নিয়মিত সার্ভে করার পরও ত্রুটি ধরা পড়েনি। তাই কেন আবার ধস নামল আমরাও বলতে পারছি না।

সর্বশেষ খবর