রবিবার, ৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৩ লাখ ৩৫ হাজার গরু-ছাগল

আসন্ন ঈদুল আজহায় বিক্রির জন্য ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৯৫৮টি কোরবানির গবাদিপশু প্রস্তুত করেছেন খামারিরা

নাটোর প্রতিনিধি

কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৩ লাখ ৩৫ হাজার গরু-ছাগল

আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য নাটোরে প্রস্তুত ৩ লাখ ৩৫ হাজার গরু-ছাগল ও মহিষ। এবার অনলাইনে বিক্রির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলায় আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিক্রির জন্য ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৯৫৮টি কোরবানির পশু প্রস্তুত করেছেন খামারিরা। জেলার ভিতরে এবং বাহিরের জেলায় এবার হাট বসিয়ে কোরবানির পশু বিক্রি করা যাবে কিনা এই আশঙ্কায় গড়ে উঠেছে অনেকগুলো অনলাইন প্ল্যাটফরম। ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৯৫৮টি কোরবানির পশু মধ্যে ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৪টি গরু ও মহিষ, বাকিগুলো ছাগল ও ভেড়া। এসব পশুর বাজারমূল্য অন্তত ৯০০ কোটি টাকা। এবার নাটোর জেলায় প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার কোরবানির পশু জবাই হবে বলে আশা করছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ইতিমধ্যে নাটোর পশুর হাট ও অনলাইন ডিজিটাল পশুর হাটসহ ৯টি অনলাইন প্ল্যাটফরম তাদের কাজ শুরু করেছে। আরও কয়েকটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে কোরবানির পশু কেনাবেচার জন্য গড়ে উঠেছে অসংখ্য অনলাইন প্ল্যাটফরম। যেগুলো থেকে ক্রেতা সহজেই পশু পছন্দ করে কিনতে পারবেন। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে মোট ১২ হাজার ১৫০টি পশুর খামার রয়েছে। এবার জেলার সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ও আকর্ষণীয় গরুর খামার করেছেন সদর উপজেলার ডালসড়ক এলাকার চাল ব্যবসায়ী রেকাত আলী। এই খামারের ১৮০টি গরুর মধ্যে বেশিরভাগ বিদেশি। এরমধ্যে রয়েছে পাকিস্তানের শাহীওয়াল, ভারতের রাজস্থান ও উলুবাড়িয়া জাতের গরু। লাল, সাদা, কালো রঙের এসব এক একটি গরু লম্বায় ৯ ফুট ও উচ্চতায় ৬ ফুটেরও বেশি। প্রতি বছর কোরবানির হাটে তোলার আগেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা গরু কিনতে তার খামারে ভিড় করলেও এবার পরিবেশ একেবারেই ভিন্ন। বিষয়টি মাথায় রেখে গত বছর থেকে এই ব্যবসায়ী ‘কাউ মার্কেট’ নামে একটি অনলাইন প্ল্যাটফরম চালু করেছেন। এই অনলাইন প্ল্যাটফরম থেকে করছেন তার খামারের গরু বিক্রি। জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া ফজলীতলার রাজু আহম্মেদের খামারে এবার ৩৭টি বড় গরু রয়েছে। তারাও এবার অনলাইনে গরু বিক্রি করবেন। শহরতলীর দিঘাপতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য তেগাছী গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম প্রায় ১৫ বছর থেকে গরুর খামার পরিচালনা করেন। এবার তার খামারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ছোট বড় ৫০টি গরু। এর মধ্যে ব্যতিক্রম রাজা, বাদশা ও কালিয়া নামের তিনটি বড় গরু। ২৫ থেকে ৩৩ মণ ওজনের এসব গরুর দাম হাঁকাচ্ছেন তিনি ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া জেলার সবচেয়ে বড় গরুর দাবিদার সদরের হয়বতপুরের ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলামের গরু কালা তুফান ইতিমধ্যে দেশ জুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছে।

তিনিও এখন তার কালা তুফানের দাম চান ১৫ লাখ টাকা। এসব খামারিরা বড়গুলো ঢাকা কমলাপুর হাটে বিক্রির স্বপ্ন দেখলেও করোনার মহামারির কারণে শেষ পর্যন্ত যেতে না পারলে অনলাইন প্ল্যাটফরমেই বিক্রি করতে চান। খামারিরা জানান, প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শে পুষ্টিকর খাবার- খৈল, গম, ভুষি, ছোলাসহ সবুজ ঘাস খাইয়ে খুব সহজেই গবাদিপশু মোটাতাজা করেছেন। ক্ষতিকর স্টেরয়েড বা হরমোন ব্যবহার করা হয়নি। কোরবানির পশু বিক্রির জন্যে প্রতি বছর জেলার ১৪টি পশুর হাট প্রসিদ্ধ হলেও গত বছর থেকে হাটে না গিয়ে এলাকার মানুষ খামারে গিয়ে সরাসরি গরু কিনতে বেশি পছন্দ করছে। আর দূরের মানুষ কিনতে শুরু করেছে অনলাইনে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী গত বছর জেলায় কোরবানির সাড়ে ৫ হাজার গরু মহিষ অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। তারা আশা করছেন প্রযুক্তির উন্নতি ও করোনার ভয়াবহতার কারণে এবার মানুষ হাটে গিয়ে পশু কিনতে চাইবে না। তাই এবার অনলাইনে বেচাকেনা বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। এছাড়া করোনার প্রকোপ ঈদের আগে কমলে জেলার হাটগুলোও বসবে। জেলার সবচেয়ে বড় কোরবানির পশুর হাট বড়াইগ্রামের মৌখাড়া হাট বসে শুক্রবার, শনিবারে বাগাতিপাড়ার পেড়াবাড়িয়া, নলডাঙ্গা ও গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড়, রবিবার নাটোর সদরের তেবাড়িয়া, সোমবার গোপালপুরের মধুবাড়ী ও সিংড়া ফেরিঘাট, মঙ্গলবার চাঁচকৈড় ও জোনাইল, এবং বৃহ¯পতিবার সদরের মোমিনপুরে গরুর হাটেও কোরবানির পশু পুরোদমে কেনাবেচা হবে। তবে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ক্রেতারা কিছু কিছু খামার থেকে কোরবানির পশু অগ্রিম অর্ডার করে রেখেছেন বলে জানা গেছে। অনেক স্থানীয় ক্রেতাও সরাসরি খামার থেকে পশু কিনছেন। শহরের আলাইপুর এলাকার কলেজ শিক্ষক ওবায়দুল্লাহ আল মামুন, আহমেদ রফিক বাবন ও মীর পাড়ার সাংবাদিক জাহীদুল হুদা ফরহাদ বলেছেন, খামার থেকে পশু কিনলে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ওই খামারেই পশু রাখার সুবিধা পাওয়া যায়, হাটে যাওয়ার কষ্টও হয় না। তাই প্রতি বছরের মতো এবারও তারা খামার থেকেই গরু কিনবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, জেলায় এবার অন্তত ৯০০ কোটি টাকার পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে। জেলার সব পর্যায়ের খামারে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পশু উৎপাদনে পশুসম্পদ বিভাগের সব কর্মকর্তা ও কর্মীরা দলগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করেছে।

সর্বশেষ খবর