মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

দোকানে পোস্ট অফিস

কালীগ্রাম মৌজার এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত ২ শতাংশ জমির ওপর বাঁশের বেড়া দিয়ে ছোট্ট একটি ঘরে আবাদপুকুর পোস্ট অফিসের গ্রাহক সেবার কাজ শুরু করা হয়

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

দোকানে পোস্ট অফিস

নওগাঁর রানীনগরে বটগাছ পড়ে আবাদপুকুর পোস্ট অফিসের ভেঙে যাওয়া মাটির ঘর -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নওগাঁর রানীনগর উপজেলার আবাদপুকুর পোস্ট অফিসের মাটির ঘরের ওপর বটগাছ পড়ে বিধ্বস্ত হওয়া ঘরটি গত দুই বছরেও নির্মাণ করা হয়নি। ফলে একদিকে যেমন কাজকর্ম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এলাকাবাসী অন্যদিকে পোস্ট অফিসের কার্যক্রম নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এলাকাবাসীর অভিযোগ এই পোস্ট অফিস থেকে গ্রাহক সেবা দিয়ে প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা রাজস্ব আয় করলেও ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এখনো তৈরি করা হয়নি পোস্ট অফিসের ঘর। জানা গেছে, পাকিস্তান সরকারের আমলে উপজেলার পূর্বাঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত বিশাল জনগোষ্ঠীকে ডাক বিভাগের সেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে তৎকালীন সময়ে আবাদপুকুর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় কালীগ্রাম মৌজার এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত ২ শতাংশ জমির ওপর বাঁশের বেড়া দিয়ে ছোট্ট একটি ঘর তৈরি করে। সেখানে আবাদপুকুর পোস্ট অফিসের গ্রাহক সেবার কাজ শুরু করা হয়। পরবর্তীতে রেকর্ডের সময় ওই ২ শতাংশ জায়গা খতিয়ানে শুধুমাত্র শ্রেণিতে ডাকঘর উল্লেখ করা হয়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই ঘরটি কয়েক দফা ভেঙে গেলে স্থানীয় কিছু ব্যক্তির একান্ত প্রচেষ্টায় ও প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা এবং এলাকাবাসীর ডাক বিভাগের সেবার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে আর্থিক সহযোগিতায় বাঁশের ঘর থেকে মাটির দেয়াল দিয়ে ঘরটি নির্মাণ করা হয়। পোস্ট মাস্টার, পোস্ট ম্যান ও একজন রানার নিরলসভাবে গ্রাহক সেবা দিয়ে প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা রাজস্ব আয় করলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এখনো পোস্ট অফিসের নিজস্ব ভবন তৈরি করা হয়নি। উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়ন, একডালা ইউনিয়ন, বগুড়ার আদমদীঘির চাপাপুর ইউনিয়নের আংশিকসহ প্রায় অর্ধশত গ্রামের বাসিন্দাদের জরুরি ডাক সেবা প্রদান করে থাকে এই পোস্ট অফিস থেকে। এরই মধ্যে গত ২০১৯ সালে ১ আগস্ট হঠাৎ করেই পোস্ট অফিসের পিছনের একটি প্রাচীনতম বটগাছ মাটির ঘরের ওপর পড়ে গেলে টিনের চালা এবং দেয়াল ভেঙে ঘরটি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এরপর থেকে প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে পোস্ট অফিস। এরপর থেকে কখনো ফলের দোকানে, কখনো ইলেকট্রনিক্স দোকানে বসে কোনো রকমে পোস্ট অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে পোস্ট অফিসের ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করায় এলাকার গ্রাহকরা পড়ছেন চরম বেকায়দায়। সেবা নিতে আসা গ্রাহক মুনির উদ্দিন, সোলেমান, আশিকসহ আরও অনেকেই জানান, পোস্ট অফিসে আমাদের জরুরি কিছু কাজ ছিল। আমরা জানি পোস্ট অফিস সে জায়গাতেই আছে। কিন্তু এসে দেখি ঘর ভাঙা পড়ে আছে কেউ নেই। অনেক লোকের কাছে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি একটি দোকানে পোস্ট অফিসের কার্যক্রম চলছে। আবার কয়েক দিন পর সেখানে গিয়ে কাজগুলো করতে পেড়েছি। এতে আমাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। উপজেলার আবাদপুকুর পোস্ট অফিস মাস্টার এমদাদুল আলম জানান, প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পাকা ভবনের জন্য দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও কোনো ফল হয়নি। ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে ঘরটি বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে একটি দোকানে অস্থায়ীভাবে কোনো মতে অফিশিয়াল কাজ করতে হচ্ছে। নতুন ঘর নির্মাণ ছাড়া ওই ঘরে অফিশিয়াল কাজ করার কিঞ্চিৎ পরিমাণ সুযোগ নেই। বগুড়া ডিভিশনের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল আবদুল হান্নানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে নতুন যোগদান করেছেন জানিয়ে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর