মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

লকডাউনে খাদ্য সংকট

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

লকডাউনে খাদ্য সংকট

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলতি কঠোর লকডাউনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছেন। বিশেষ করে যেসব শ্রমজীবী মানুষ প্রতিদিনের খাবারের জন্য প্রতিদিন কাজ করেন তাদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কঠোর লকডাউনের কারণে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা। ফলে খাদ্যাভাবে দিশাহারা ভ্যানচালক, রিকশাচালক, পরিবহন শ্রমিক, ইমারত নির্মাণকর্মী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হোটেল শ্রমিক, সেলুন কর্মচারী, স্বর্ণ কর্মচারী, কেজি স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী, দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের এসব পরিবারের লোকজন। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলাও যাচ্ছে না। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে হতাশার ছাপ বিরাজ করছে। তারা কি কাজ করতে পারবেন- তা নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। এক দিকে পরিবার-পরিজন, অন্যদিকে আয় একেবারে কমে গেছে। নিম্নবিত্তদের কেউ কেউ  সরকার ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু খাদ্যসহায়তা পেয়েছেন। তারা বাকি সময়টা কীভাবে চালাবেন তা নিয়ে তাদের ভাবনার শেষ নেই। অন্যদিকে দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মচারীরা। যেটুকু সঞ্চয় ছিল তাও বসে বসে খেয়ে শেষের পর্যায়ে পৌঁছেছে। আগামীতে কীভাবে দিন পার করবেন তা নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। কারণ তারা না পারছেন কারও কাছে চাইতে, না পারছেন ছোট কোনো কাজ করতে। এতে করে দিন দিন তাদের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে রহিম নামে এক রিকশাচালক জানান, করোনায় পেট মানে না, সকাল ৭টায় বের হয়ে দুপুর পর্যন্ত আয় হয়েছে মাত্র ১৪০ টাকা। যাত্রী তেমন না থাকায় সামান্য টাকা নিয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। তাছাড়া সীমিত আকারে চলাচল করার কারণে আয়ও সীমিত হয়ে গেছে। অফিস-আদালত, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে, দৈনিক দিনমজুর হিসেবে যারা কাজ করতেন তারাও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তারা দিন প্রতি ৩ থেকে ৪শ টাকা আয় করতেন, তাদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ। এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চালক ও তাদের সহকারীদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

তারাও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিন গুনছেন, কবে নাগাদ চালু হবে পরিবহন। দীর্ঘদিন ধরে বাস বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব কষ্টের মধ্যে রয়েছেন তারা। জেলা মোটর, ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আইয়ুব আলী জানান, জেলায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবহন শ্রমিক রয়েছেন, তারা এখন বেকার। খাদ্য সহায়তার জন্য প্রথম পর্যায়ে ৩০০ শ্রমিকের তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আবার ৩০০ জনের তালিকা দেওয়া হলেও কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। সরকারিভাবে প্রণোদনা পাওয়া গেলে তাদের জন্য উপকার হতো। এদিকে হোটেল কর্মচারীরা দিনমজুরি হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন, বর্তমানে সীমিত আকারে হোটেলগুলো খোলা রয়েছে। শুধু প্যাকেটে করে খাবার সরবরাহ করতে পারা যাবে। ফলে মালিকরা হোটেল কর্মচারীর সংখ্যাও কমিয়ে দিয়েছেন। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ ছাড়া ছোট ছোট চায়ের দোকান মালিক-কর্মচারী, ফেরিওয়ালা, ভ্রাম্যমাণ ফল বিক্রেতারাও পড়েছেন বিপাকে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, বিক্ষিপ্তভাবে খাদ্যসহায়তা না দিয়ে যদি বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয় তাহলে এর সুফল লাভ করবে মধ্যবিত্তসহ নিম্ন মধ্যবিত্তরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর