বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনায় আশা জাগিয়েছে পুলিশ অক্সিজেন ব্যাংক

নাটোরে করোনা রোগীদের সেবায় টেলিফোনে কল করলে ১০ মিনিটের মধ্যেই মিলছে ফ্রি অক্সিজেন সিলিন্ডার

নাটোর প্রতিনিধি

করোনায় আশা জাগিয়েছে পুলিশ অক্সিজেন ব্যাংক

নাটোরে করোনা ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের আশা জাগিয়েছে পুলিশ অক্সিজেন ব্যাংক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি চলমান করোনা মহামারীতে নানাবিধ মানবিক কার্যক্রম চালাচ্ছে পুলিশ। অক্সিজেন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এর অন্যতম। বাড়িতে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন এমন রোগীরা দিন বা রাতে শুধু একটি মোবাইল কল দিলেই কোনো প্রকার অর্থ ছাড়াই পৌঁছে যাচ্ছে অক্সিজেনের সিলিন্ডার। যতটা লাগে ততটাই সরবরাহ করা হয়। অক্সিজেন সরবরাহ ও রোগী বহনের জন্য পুলিশ লাইনসে সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্সসহ চারটি গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠার ১২তম দিনে গতকাল পর্যন্ত নাটোরের ৩ শতাধিক মানুষ ঘরে বসে অক্সিজেন সেবা নিয়েছেন।

চোখের সামনে অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্টে মানুষ মারা যাবে তা সহ্য করতে না পেরে বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহের উদ্যোগ নেন মানবিক পুলিশ সুপার হিসেবে পরিচিত লিটন কুমার সাহা। ২৩ জুন শহরের বড় হরিশপুরে জেলা পুলিশ লাইনসের ড্রিল শেডে এ অক্সিজেন ব্যাংকের উদ্বোধন করেন রাজশাহী রেঞ্জের উপমহা পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) আবদুল বাতেন।

জেলা পুলিশসূত্র জানান, প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেড, পাকিজা গ্রুপ ও নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরীর সহযোগিতায় ১০১টি সিলিন্ডার নিয়ে এর কার্যক্রম শুরু হয়। ইতিমধ্যে নাটোর পৌরসভার ৩ শতাধিক মানুষ এ সেবা গ্রহণ করেছেন। করোনা মহামারীসহ সার্বিক প্রয়োজনে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি যে কোনো নাগরিকের প্রয়োজনে সরবরাহ নিশ্চিতে এ সেবা চালু করল জেলা পুলিশ। ০১৩২০-১২৪৫০২ নম্বরে কল করলেই হাসপাতাল কিংবা বাসায় অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছে পুলিশ।

পুলিশ অক্সিজেন ব্যাংকের সেবা গ্রহণকারী শহরের কানাইখালী মহল্লার রাশেদুল ইসলাম রাশু বলেন, ‘এ সেবা চালু না হলে আমার বাবা-মা অক্সিজেনের অভাবে হয়তো দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতেন। বাবা-মার শ্বাসকষ্ট দেখে পরিবারের সবাই যখন দিশাহারা তখনই পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহাকে কল দিলে গভীর রাতে অক্সিজেন নিয়ে আমার পরিবারের পাশে দাঁড়ান। এরপর যখনই ফোন দিয়েছি ১০ মিনিটের মধ্যে পুলিশ সদস্যরা অক্সিজেন নিয়ে হাজির। পুলিশের এ এক মহতী উদ্যোগ।’

নাটোর জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, ‘আমার স্ত্রী অসুস্থ হলে পুলিশের অক্সিজেন ব্যাংকের সেবা নিয়েছি। পুলিশ সদস্যরা যেভাবে এ কাজে এগিয়ে আসছেন, সহযোগিতা করে যাচ্ছেন তা অনেকেই করতে পারেন না। এ রকম কাজে সমাজের সবারই এগিয়ে আসা উচিত।’

শহরের আলাইপুরের নাজমা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী শ্বাসকষ্টের রোগী। কয়েক দিন আগে মধ্যরাতে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে আমি পুলিশ সুপারকে কল দিই। দেখি ১০ মিনিটের মধ্যেই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির পুলিশ সদস্যরা। সেদিন অক্সিজেন না পেলে বিপদেই পড়তে হতো।’

পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘অক্সিজেনের অভাবে অনেকেই মারা যায়। এটা আমাদের পীড়া দেয়। অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করলে ভালো হয় এ চিন্তা থেকেই নাটোরে পুলিশ অক্সিজেন ব্যাংকের যাত্রা। রোগীর অবস্থান নাটোর শহরে হলে ১০ মিনিটের মধ্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়া হবে। শহরের বাইরে সময় কিছুটা বেশি লাগতে পারে। হাসপাতালেও যদি অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রয়োজন পড়ে সেখানেও পৌঁছে দেওয়া হবে। বিনামূল্যে ২৪ ঘণ্টা এ সেবা চালু থাকবে। এ ছাড়া রোগী পরিবহনেও দুটি অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিনামূল্যে সিলিন্ডার সেট, টেকনোলজি সাপোর্ট ও প্রয়োজন শেষে সিলিন্ডার ফেরত নিয়ে আসার সেবা দেবে জেলা পুলিশ।’ নাটোরে করোনা রোগিদের সেবায় টেলিফোনে কল করলেই ১০ মিনিটের মধ্যে মিলছে ফ্রি অক্সিজেন সিলিন্ডার।

সর্বশেষ খবর