বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

৪০ বছরেও কয়েদির দেখা মেলেনি উপকারাগারে

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

৪০ বছরেও কয়েদির দেখা মেলেনি উপকারাগারে

আশির দশকে প্রায় ১২ দশমিক ২ একর জমির ওপর চারদিকে সুউচ্চ প্রাচীর দিয়ে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় নির্মাণ করা হয় একটি উপকারাগার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলা কারাগারের কয়েদির চাপ সামাল দেওয়ার ভাবনা থেকেই তৎকালীন সরকার কারাগারটি নির্মাণ করে। কিন্তু নির্মাণের পর প্রায় ৪০ বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও আজ পর্যন্ত কোনো কয়েদির পা পড়েনি কারাগারটিতে। দীর্ঘদিন অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা কারাগারটি বর্তমানে গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। জেলা সমাজসেবা অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, আশির দশকে সারা দেশের ১৭টি জেলায় ২৩টি উপকারাগার নির্মাণ করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার মধ্যে একটি ছিল কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার এ উপকারাগারটি। কারাগারটি বর্তমানে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের খোকসা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত। এ উপকারাগারটিতে রয়েছে একটি প্রবেশপথ, দুটি কয়েদি রাখার হলরুম, দুটি সাক্ষাৎকার কক্ষ, একটি স্টোররুম, দুই কক্ষবিশিষ্ট অফিস রুম, তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি কোয়ার্টার আর বেশ কয়েকটি টয়লেট। স্থানীয় বাসিন্দা হামিদুল ইসলাম বলেন, যখন কারাগারটির নির্মাণকাজ শুরু হয় তখন তিনি এখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছিলেন। এখানে কয়েদিদের এনে রাখার কথা ছিল। কিন্তু কোনোদিন এখানে কয়েদির দেখা মেলেনি। অযত্ন-অবহেলায় বহু টাকা ব্যয়ে নির্মিত কারাগারটি দিনে দিনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সরেজমিন দেখা যায়, উপকারাগারটির প্রবেশমুখে কারারক্ষীর পরিবর্তে দুটি ছাগল পাহারা দিচ্ছে। মূল ফটকে প্রবেশ করতেই বাম দিকে চোখে পড়বে নারী কয়েদির ওয়ার্ড। একটু সামনে এগোলেই পুরুষ ওয়ার্ড। তবে সেখানে কয়েদির পরিবর্তে দেখা মিলেছে গরু-ছাগলসহ গবাদিপশুর। পাশেই রয়েছে মুরগি পালনের ছোট একটি ঘর। এক কথায় বলতে গেলে এটি এখন কয়েদি রাখার পরিবর্তে গবাদিপশু পালন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।  সূত্র জানায়, উপকারাগারটি ব্যবহার না করায় ২০১৮ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে কারাগারটির নিয়ন্ত্রণ জেলা সমাজসেবা অফিসের হাতে ন্যস্ত করে। কিন্তু সমাজসেবা কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এটি এক প্রকার অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কারাগারটি এখনো হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালনের খামার হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে কারাগারটিতে সমাজসেবা অফিসের একজন নৈশপ্রহরী কর্মরত রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দেয়াল থেকে প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে। দরজা-জানালা অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। অফিস স্টাফদের তিন কক্ষবিশিষ্ট কোয়ার্টারটি অনেক দিন হয়ে গেছে দখলে নিয়েছেন স্থানীয়রা। জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রোকসানা পারভীন বলেন, ‘উপকারাগারটি নানা জটিলতায় আজও চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রণালয় ১০ হাজার এক টাকা প্রতীকী মূল্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপকারাগারটি রেজিস্ট্রি করে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সেটি কবে সম্পন্ন হবে তা এই মুহুর্তে বলা সম্ভবপর হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর