সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

বর্ষাকালীন তরমুজ চাষে বাজিমাত

প্রতিটি তরমুজ ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। ২ বিঘা জমিতে খরচ হয় ৮০ হাজার টাকা। তরমুজ বিক্রি করে ৪ লাখ টাকা পাওয়া যায়

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

বর্ষাকালীন তরমুজ চাষে বাজিমাত

দেশে সচরাচর গ্রীষ্মকালে তরমুজের ব্যাপক আবাদ হলেও প্রথমবারের মতো বর্ষাকালীন সময়ে তরমুজের আবাদ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার দাঁদপুর ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক। তাদের একজন রাঙামুলারকান্দি গ্রামের বোরহান মাহমুদ। বর্তমানে তার জমিতে ছোট্ট মাচায় ঝুলছে কালো রঙের নানান সাইজের তরমুজ। অসময়ে তরমুজের ফলন দেখে খুশি স্থানীয়রা। বোরহানের তরমুজ খেত দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন ছুটে আসছেন। অনেকেই বোরহানের তরমুজ খেত দেখে নিজেরাও বর্ষাকালীন তরমুজ আবাদের কথা জানিয়েছেন। বোরহান মাহমুদ জানান, তিনি দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় ছিলেন। গত দুই বছর আগে তিনি দেশে ফিরে আসেন। দেশে আসার পর বিভিন্ন ব্যবসার কথা চিন্তা করেন। কিন্তু কোনো ব্যবসাই তার মন মতো হচ্ছিল না। সিদ্ধান্ত নিলেন কৃষিকাজে নেমে পড়বেন। গতানুগতিক কোনো কৃষি আবাদে না গিয়ে ভিন্ন ধরনের কিছু করার চিন্তা করলেন। ইউটিউব চ্যানেলে কৃষি ফসলের ভিডিও  দেখতে গিয়ে ‘ব্লাক ডায়মন্ড তরমুজ’ বিষয়ে জানতে পারেন। ভিডিওটি দেখে সে সিদ্ধান্ত নেন এটির আবাদ করবেন। যেই কথা সেই কাজ। শুরু হলো বোরহানের ব্লাক ডায়মন্ড তরমুজের আবাদ নিয়ে গবেষণা। রোজার ঈদের দুদিন পর চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে কিনে আনেন বীজ। নিজেদের পৈত্রিক ২ বিঘা পতিত জমিতে লাগান সেই বীজ। কয়েকদিন পর সেই বীজ থেকে চারা গজালে ছোট্ট করে মাচা তৈরি করেন। সেই মাচায় এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে বোরহানের স্বপ্নের ব্লাক ডায়মন্ড তরমুজ। সেই তরমুজগুলো যাতে কোনো পোকা কেটে দিতে না পারে সেজন্য খেতজুড়ে ‘আলোক ফাঁদ’ বসিয়েছেন। তরমুজগুলো নেটের ব্যাগ দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। বোরহান জানান, তার জমিতে এখন প্রায় ৪ হাজার বিভিন্ন সাইজের তরমুজ রয়েছে। প্রতিদিনই খেত থেকেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে তরমুজগুলো। প্রতিটি তরমুজ ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। জমি তৈরিসহ ২ বিঘা জমিতে তার সর্বমোট খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। আর জমিতে থাকা তরমুজগুলো তিনি বিক্রি করতে পারবেন ৪ লাখ টাকার উপরে। সব খরচ বাদ দিয়ে সে ৩ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে জানান। বোরহানের তরমুজ স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সারা ফেলেছে। বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন তরমুজ কিনতে ছুটে আসছেন। খেত থেকেই বিক্রি করছেন সেই তরমুজগুলো। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক ব্যবসায়ীও আসছেন বোরহানের কাছে। তারা পাইকারিভাবে তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়রা জানান, সখের বসে বোরহান এ তরমুজের আবাদ শুরু করে। বর্তমানে সে তরমুজের আবাদ করে বেশ লাভবান। ব্লাক ডায়মন্ড তরমুজ খেতে অনেক মজা। তরমুজগুলো প্রচুর মিষ্টি। উপরিভাগ কালো হলেও ভিতরে টকটকে লাল। অসময়ে তরমুজ আবাদ করে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছেন বোরহান। স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষিত বেকার যুবক জানান, স্বল্প সময়ে ফলন পাওয়া এবং অধিক লাভজনক হওয়ায় তারাও এ তরমুজ আবাদে ঝুঁকেছেন। করোনাকালীন সময়ে চাকরির কথা না ভেবে তারা এ তরমুজের আবাদ করার জন্য বোরহানের কাছে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন পরামর্শ নিচ্ছেন। আরেক চাষি গোলাম কাদের জানান, তার কাছে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা তরমুজ কিনতে আসছেন। কিন্তু তিনি তাদের চাহিদা মোতাবেক তরমুজ সরবরাহ করতে পারছেন না। তিনি বলেন, আগামীতে তিনি আরও বেশি জমিতে এ তরমুজের আবাদ করবেন। এছাড়া স্থানীয় অনেকেই তার কাছ থেকে এ তরমুজ আবাদে পরামর্শ নিচ্ছেন। তিনিও তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করছেন।

সর্বশেষ খবর