সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

ত্রিমুখী সংকটে করোনা ওয়ার্ড

১৮ শয্যার করোনা ওয়ার্ডে ১২ জন চিকিৎসক থাকলেও সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগীদের চাপের কারণে ৭২ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু চিকিৎসক সংখ্যা বাড়ানো হয়নি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

ত্রিমুখী সংকটে করোনা ওয়ার্ড

ত্রিমুখী সংকটে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড ওয়ার্ড। এখানে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক, ওষুধ ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ফলে এ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। জানা গেছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতে ১৮ শয্যাবিশিষ্ট করোনা ওয়ার্ডে ১২ জন চিকিৎসক থাকলেও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগীদের চাপের কারণে ৭২ শয্যায় উন্নীত করা হয় করোনা ওয়ার্ড। কিন্তু শয্যার সংখ্যা বাড়লেও চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো হয় মাত্র ৮ জন। বর্তমান করোনা ওয়ার্ডে ৭১ জন রোগী ভর্তি থাকলেও (গতকাল রবিবার পর্যন্ত) ২০ জন চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে বলে জানান করোনা ওয়ার্ডের ফোকাল পারসন ডা. আহনাক শাহরিয়ার। তিনি জানান, ১০ জনের চিকিৎসকের দল ১৫ দিন করে সকাল, দুপুর ও রাত অর্থাৎ তিনবেলা ডিউটি করছেন। এর মধ্যে যারা রাতের ডিউটি করছেন তাদের পরের দিন ডিউটি দিলে খুব অসুবিধা হয়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। ডা. আহনাক শাহরিয়ার আরও জানান, রক্ত জমাট যাতে না বাঁধে সেই ইনোক্সাপারিন ইনজেকশন বর্তমানে হাসপাতালে সরবরাহ নেই। ইনচার্জসহ ৪৯ জন নার্স রয়েছেন। তবে নার্সের সমস্যা না থাকলেও আয়া ও সুইপার সমস্যা কিছুটা রয়েছে। মাত্র ৬ জন আয়া, ৬ জন ওয়ার্ডবয় ও ৬ জন পরিচ্ছনতাকর্মী দিয়ে সেবা দিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোগীর স্বজন জানান, হাসপাতালে সবরকম ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে অনেক গরিব রোগীর স্বজনকে বাহির থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। অন্যদিকে ওয়ার্ডে রোগীদের খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ সময়মতো পরিষ্কার না করায় নোংরা এবং পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বর্তমানে অক্সিজেনের প্ল্যান্ট থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ চালু হওয়ায় আর অক্সিজেনের সমস্যা না থাকলেও এই গরমে ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে রোগীদের পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগে। এছাড়া একাধিক রোগীর স্বজন অভিযোগ করে জানান, ডিউটিরত চিকিৎসকরা রোগীর কাছে যান না বললেই চলে। তারা নার্সকে দিয়ে কাজ সেরে নিচ্ছেন। আর দুপুরের খাবার সময়মতো দেওয়া হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালে ৩টি অ্যাম্বুুলেন্স থাকলেও ২টি চালু রয়েছে। বেশ কয়েকদিন থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া করোনা রোগীদের এখন ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২টি লিফট থাকলেও লিফটম্যান না থাকায় ৫ ও ৬ তলায় করোনা ওয়ার্ডে রোগীসহ স্বজনদের কষ্টের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। আর ১টি লিফটের কারিগরি সমস্যা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে গণপূর্ত বিভাগ ঠিক করে দিচ্ছে না। অন্যদিকে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহীর পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে, তাই রিপোর্ট পেতে বিলম্ব হওয়ায় জেলায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তাই হাসপাতালে আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবি নাগরিক কমিটির। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের আরএমও ডা. নুরুননাহার নাসু জানান, হাসপাতালে কভিড বেড সংখ্যা ৭২টি এবং বর্তমানে রোগী ভর্তি রয়েছে ৭১ জন (গতকাল রবিবার পর্যন্ত)। এছাড়া গত মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত (১০ জুলাই) ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৫৫২ জন, অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১৯১টি এবং মারা গেছে ৮৩ জন।

এদিকে সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, সদর হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য আরটিপিসিআর ল্যাব, আইসিইউ, চিকিৎসক, ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীসহ চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে দ্রুত সময়ে সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর