মঙ্গলবার, ২০ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

১৭ মাসেও হয়নি পিসিআর ল্যাব

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

১৭ মাসেও হয়নি পিসিআর ল্যাব

দেশে করোনা সংক্রমণের রেড জোনে অবস্থান মৌলভীবাজার জেলা। অথচ সংক্রমণের ১৭ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো এ জেলায় নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্র (পিসিআর ল্যাব) স্থাপন হয়নি। ল্যাব স্থাপনে প্রবাসী অধ্যুষিত এ জেলার বাসিন্দারা একাধিকবার দাবি ও আন্দোলন করে আসলেও কর্ণপাত করছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মৌলভীবাজারে পরীক্ষা কেন্দ্র না থাকা জেলায় রোগী শনাক্তের পরিমাণ কম। এসব জেলায় নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পেতেও সময় বেশি লাগছে। দূরের পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানোর সময় অনেক ক্ষেত্রে নমুনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারীর শুরু থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক শর্ত রোগী শনাক্ত করা। পরীক্ষা যত বেশি হবে আক্রান্ত ব্যক্তিও তত বেশি শনাক্ত হবে। রোগী শনাক্ত হলে এবং এরপরের ধাপগুলো ট্রেসিং, কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন যথাযথভাবে পালন করা হলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কিন্তু দেশে নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না। সিভিস সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে ৪২ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ৫৪ জন।  এদিকে এ জেলার নমুনা পরীক্ষা করা হয় সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে। সময় লাগে ৩/৪ দিন। আবার কখনো কখনো পাঁচ দিনও লেগে যায়। প্রতিদিন গড়ে ৫০/৬০ জন রোগীর পজিটিভ আসছে। নমুনা দেওয়ার পর থেকে ফলাফল আসার পূর্ব পর্যন্ত রোগীরা বাইরে ঘোরাফেরা করছেন এবং পরিবারের সবার সঙ্গে একত্রে ওঠাবসা করছেন। অথচ দেখা গেছে তাদের পজিটিভ এসেছে। তাদের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছেন আরও অনেকে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এ নিয়ে দায়সারা বক্তব্য দিচ্ছে। গতানুগতিক কাজের বাইরে গিয়ে কিছু করার চিন্তা করছে না জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এমন দায়সারা কাজ নিয়ে অসন্তুষ্ট জেলার সচেতন মহল। তাদের দাবি জেলা সদর হাসপাতালে স্থাপনকৃত জিনএক্সপার্ট মেশিন দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ১৭ মাসেও এর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। তারা সরকারি বরাদ্দের দিকে চেয়ে আছে। এখানে পরীক্ষা করা হলে ফলাফল আসতে এত সময় লাগত না। সংক্রমণও কমে আসত। সদর হাসপাতালে নমুনা দেওয়া আবদুস সামাদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, নমুনা সংগ্রহের ৪/৫ দিন পরে ফলাফল আসে। এ সময়ের মধ্যে অনেক পজিটিভ রোগীর মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাজ্য অনলাইন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল আম্বিয়া বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মৌলভীবাজারের প্রবাসীদের ভূমিকা কোনো অংশে কম নয়। অথচ এ জেলাকে সব সময়ই সরকারি বরাদ্দের দিক থেকে পিছিয়ে রাখা হচ্ছে।  করোনায় মারা যাওয়া রোগীদের দাফন-কাফন কাজে নিয়োজিত শেখ বোরহান উদ্দিন (রহ.) ইসলামী সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন, সংক্রমণের শুরু থেকেই মৌলভীবাজারে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য আমরা দাবি করে আসছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

 সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, একাধিকবার চাহিদা পাঠানো হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। জিনএক্সপার্ট মেশিন দিয়ে করোনা পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা অনেক ব্যয়বহুল। যার কারণে আমরা এদিকে আগাতে পারছি না।

সর্বশেষ খবর