শনিবার, ২৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

কুড়িগ্রামে বাড়ছে টাইফয়েড রোগী

খন্দকার একরামুল হক সম্রাট, কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামে বাড়ছে টাইফয়েড রোগী

কুড়িগ্রামে পৌর এলাকার প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে বাড়ছে টাইফয়েড রোগীর সংখ্যা। দিন দিন মারাত্মকভাবে বেড়েই চলেছে এ রোগীর সংখ্যা। আর পানিবাহিত এ রোগের মূল কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে পৌরসভার সরবরাহকৃত পানিকে। পানির সংযোগ লাইনের সঙ্গে কিছু কিছু জায়গায় সুয়ারেজ লাইন সংযুক্ত হয়ে যাওয়ায় পানি দূষণের আশঙ্কা পৌরবাসীর। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ পানি সরবরাহের সংযোগ লাইনের কোথাও কোথাও পুরনো হওয়ায় কিছুটা পানি সমস্যা হচ্ছে বলে জানান। এদিকে, টাইফয়েড রোগী বেড়ে যাওয়ায় জেনারেল হাসপাতালে অন্য জ্বরের রোগীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আনুপাতিক হারে টাইফয়েড রোগী অনেক বেশি ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার কথা বলছেন জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা। জেলা হাসপাতাল সূত্র জানায়, করোনার পাশাপাশি টাইফয়েড রোগীর সংখ্যা গত এক থেকে দেড় মাসে হাসপাতালে বেড়েছে। আড়াই শ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া, আমাশয়, সর্দি-কাশি জ্বরে প্রতিদিনই কমবেশি রোগী ভর্তি হয়।

এর বাইরে গত দেড় মাসে শুধু টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আড়াই শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন। এসব রোগীর অধিকাংশই শিশু ও উঠতি বয়সের যুবক এবং নারী। সূত্র আরও জানায়, গত ২২ এপ্রিল থেকে টাইফয়েডসহ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে হাসপাতালে। এ রোগে হাসপাতালের অভ্যন্তরের পাশাপাশি বহির্বিভাগেও রোগীর চাপ দেখা গেছে। প্রতিদিন বাড়ছে টাইফয়েড রোগীর সংখ্যা। একই বাড়িতে একজন দুজন করে শুরু করে পরিবারের সব সদস্য আক্রান্ত হচ্ছেন এ রোগে। এ অবস্থায় চিন্তিত রোগী ও তার স্বজনরা। অপরদিকে যেসব পরিবারের কেউই এখনো আক্রান্ত হননি তারাও পৌরসভার পানি সমস্যায় টাইফয়েড আতঙ্কে রয়েছেন। কলেজ রোড-সংলগ্ন পুরাতন রেজিস্ট্রি অফিস পাড়ার সুজা উদ্দিন জানান, ‘আমার বাড়িতে প্রথমে আমার টাইফয়েড ধরা পড়ে। এরপর আমার ছেলে, তারপর মেয়ে শেষে আমার স্ত্রীর টাইফয়েড রোগ দেখা দেয়। মূলত পৌরসভার সাপ্লাই ওয়াটারের কারণে আমাদের টাইফয়েড হয়েছে। জেনারেল হাসপাতালে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়। ডাক্তার বলছেন পানিবাহিত টাইফয়েড রোগ পানি সমস্যার কারণে হয়েছে।’ অন্যদিকে ঘোষপাড়ার আবদুস সালাম মিয়া জানান, গত পনের দিন থেকে আমার বাড়িতে স্ত্রী ও ছেলের টাইফয়েড রোগী নিয়ে আমি বিপাকে। দামি দামি ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রুমী আক্তার বলেন, বাড়িতে কয়েক দিন ধরে জ্বর ছিল। প্রায় ১০৪-১০৫ ডিগ্রি জ্বর ওঠে। কোনোভাবেই সারছিল না। পরে হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসক অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হন টাইফয়েড। এদিকে এ রোগ বৃদ্ধির ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। বিনামূল্যে সরকারিভাবে দেওয়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেফটি এক্সজোন ইনজেকশনও প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, টাইফয়েড রোগী ইদানীং অনেক পাচ্ছি হাসপাতালে। তবে বিশেষ কিছু এলাকা থেকে রোগী আসছে বেশি। যেহেতু এটি পানিবাহিত রোগ তাই বিশুদ্ধ পানি পান না করায় এরূপ হয়ে থাকতে পারে। অপরদিকে পানিতে কোনো দূষণ কিংবা ত্রুটি রয়েছে কিনা পৌরসভার কয়েকটি আক্রান্ত স্থান থেকে পানি উত্তোলন করে ঢাকায় প্রেরণের কথা জানান সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে  পৌর কর্তৃপক্ষ ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। তবে কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র কাজিউল ইসলাম সরবরাহকৃত লাইন পুরাতন ও নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, দ্রুত এটি সংস্কার করতে জনস্বাস্থ্যকে চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং সমস্যা সমাধান সম্ভবপর হবে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সায়হান আলী পৌর মেয়র ও সিভিল সার্জনের অবহিতকরণের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি। হোটেল ও রেস্তোরাঁয় ব্যবহার করা অফুটানো পানি পান করে টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হতে পারেন মানুষ। সংস্কারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর