শনিবার, ২৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

বগুড়ায় পাকা সড়কে মরণফাঁদ

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় পাকা সড়কে মরণফাঁদ

সড়কে কার্পেটিং নেই। ইটের খোয়াও তেমন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। পুরো পাকা সড়কে যেন মাটি বের হয়ে গেছে। বড় বড় গর্ত ও বৃষ্টিতে কাঁদাযুক্ত সড়ক যেন এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রায় এক যুগ ধরে সড়ক সংস্কার না করায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে প্রায় ২৫ গ্রামের কয়েক লাখ মানুষকে। এমন চিত্র বগুড়ার ধুনট উপজেলার দিঘলকান্দি থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার পাইকপাড়া পর্যন্ত। প্রায় সাড়ে প্রায় তিন কিলোমিটার পাকা সড়ক এক যুগেও সংস্কার না হওয়ায় দুই জেলার দুই উপজেলাবাসীর ভোগান্তির শেষ নেই।  খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালে বগুড়ার ধুনট উপজেলার দিঘলকান্দি থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার পাইকপাড়া পর্যন্ত এই রাস্তাটি প্রথম পাকাকরণের উদ্যোগ নেয় ধুনট উপজেলা এলজিইডি অফিস। কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও পরবর্তীতে সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ ওই সড়কটি তাদের তত্ত্বাবধানে নির্মাণের জন্য কাজিপুরের পাইকপাড়া থেকে ভানুডাঙ্গা বাজার পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণ করে কাজ শুরু করেন। কিন্তু সড়কটির নির্মাণ কাজ ধুনট উপজেলার দিঘলকান্দি পর্যন্তই থেমে যায়। ধুনটের দিঘলকান্দি গ্রামের আজিজার রহমান ও খলিলুর রহমান জানান, এই সড়ক দিয়ে ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ী, দিঘলকান্দি, বাটিকাবাড়ী, গোপালনগর, মহিশুরাসহ প্রায় ২৫ গ্রামের লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করেন। সড়কটি দিয়ে বগুড়া জেলার মানুষজন চলাচল করলেও সড়কটি নির্মাণ করেছে সিরাজগঞ্জ সওজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা এই সড়কটি নির্মাণের পর থেকে কোনোদিন আর সংস্কার করেননি। এ কারণে পুরো সড়কের কার্পেটিং ও ইটের খোয়া উঠে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে ভেঙে যানবাহন চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এই সড়ক দিয়ে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর ও বগুড়ার ধুনট উপজেলার কৃষকরা তাদের কৃষিপণ্য, সবজি, ধান, পাট, পরিবহন করে থাকে। সড়কটি এখন ভাঙা ও এবড়ো খেবড়ো থাকায় কৃষিপণ্য পরিবহনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও চলাচলে দুর্ভোগে পড়েছে। সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়কের কোথাও কোথাও গাইড ওয়াল ভেঙে পাশের খাদে চলে যাওয়ায় পথচারীদের চলাচলে আরও ঝুঁকি বেড়েছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সমাজ উন্নয়কর্মী ইমরান হোসেন জানান, সড়কটি দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারে না। গ্রামের ভ্যান-রিকশা চলাচল করতে গিয়ে সড়কের মাঝের গর্তে পড়ে বিকল হয়ে যায়। বর্ষাকালে গর্তে পানি জমে গিয়ে আরও মারাত্মক হয়ে যাচ্ছে। পথচারীদের ঝুঁকি বাড়ছে। মাঝে মাঝেই কেউ না কেউ গর্তে পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছেন। উপজেলার চৌকিবাড়ী গ্রামের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, এই সড়কে ভ্যান-রিকশা কোনো রকমে চলাচল করলেও ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এ কারণে কৃষি পণ্য পরিবহনসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষ নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। গোপালনগর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন সরকার বলেন, উপজেলা সদরের সঙ্গে গোপালনগর ইউনিয়নবাসীর যাতায়াতের এই সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সড়কটি পুনর্নির্মিত হলে দক্ষিণ ধুনটের মানুষের নাগরিকসেবা নিশ্চিত হবে। ধুনট উপজেলা প্রকৌশল কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, সড়কটি ধুনট উপজেলার আওতাভুক্ত হলেও সিরাজগঞ্জ সওজ কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করায় সেখানে বরাদ্দ দিয়ে এলজিইডির পক্ষে সড়ক মেরামত করা সম্ভব নয়। বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ হাবিবর রহমান জানান, সড়কটি ১২ ফুট থেকে ১৮ ফুট প্রশস্তকরণের লক্ষ্যে টেন্ডার হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু করতে সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সড়কটি সংস্কারে এলাকাবাসীও দাবি করেছে। যত দ্রুত সম্ভব সড়কটি সংস্কারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর