শিরোনাম
সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

পাহাড়ে পর্যটনশিল্পে ধস

ফাতেমা জান্নাত মুুমু, রাঙামাটি

পাহাড়ে পর্যটনশিল্পে ধস

মহামারী করোনায় পর্যটকশূন্য রাঙামাটি। ধস নেমেছে পর্যটনশিল্পে। আয় নেই। আছে ব্যয়। চার মাস ধরে বন্ধ পর্যটন কেন্দ্রগুলো। দিন দিন বাড়ছে লোকসানও। মাত্র চার মাসে রাজস্ব খাতে ঘাটতি রয়েছে ১ কোটি টাকা। আয় সংকট চলমান থাকলে বন্ধ হতে পারে কর্মচারীদের বেতনও। শুধু পর্যটন ব্যবসায়ীরা নয়, এর প্রভাব পড়ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের তাঁত বস্ত্রশিল্পের ওপরও। তাই টানা পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকলে নানামুখী সংকটের শঙ্কা বাড়বে বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গত এপ্রিল মাস থেকে বন্ধ রাঙামাটির পর্যটন কেন্দ্রগুলো। তাই নেই কোনো পর্যটকের আনাগোনা। তাই একেবারে স্থবির পর্যটন-কেন্দ্রিক সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই ঈদুল আজহাতেও লাগেনি উৎসবের রং। নেই কোথাও আনন্দের উচ্ছ্বাস। করোনা সংক্রমণের শঙ্কায় ম্লান করেছে সব আয়োজন। অথচ গেল বছরও পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় ছিল এ পাহাড়ে। কিন্তু এখন পুরোই ভিন্ন চিত্র। একেবারে খালি সব হোটেল, মোটেল ও রেস্ট হাউসগুলো। তাতেই বেকার হয়ে পড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। শুধু রাঙামাটি নয়, একই চিত্র দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত অপর দুই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। করোনার কালো ছায়ায় ধস নেমেছে পর্যটন ব্যবসায়। বেকার সময় পার করছে হাজারো পর্যটন শ্রমিক। এক সময় যে পাহাড়জুড়ে জমজমাট ছিল ভ্রমণপিয়াসুদের আনাগোনায়, যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে হাজারো পর্যটক ছুটে আসত সবুজ পাহাড় ও নদী ঘেরা মনোরম প্রকৃতির লীলাভূমি পার্বত্যাঞ্চলে, এখন তা কল্পনা করা যায় না। রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের নৌযান ঘাটের ম্যানেজার রমজান আলী জানান, পর্যটক নেই, তাই ব্যবসাও নেই। নৌযান ঘাটের প্রায় শতাধিক মানুষ বেকার রয়েছে। কাপ্তাই হ্রদে এখন আর কেউ নৌভ্রমণ করে না। করোনার কারণে সবকিছুতেই ধস নেমেছে। অন্যদিকে পাহাড় সেজেছে নতুন রূপে। সবুজ পাহাড়ে এক পসলা বৃষ্টিতে দোল খেলছে সাদা মেঘের ভেলা। একই সঙ্গে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে হরেক রঙের ফুলের মেলা। পাখ-পাখালির নির্মল আনন্দ আর অনাবিল উচ্ছ্বাস। প্রকৃতি যেন শান্ত, স্নিগ্ধ আর কোমলতায় রূপ নিয়েছে। কিন্তু তা দেখার কেউ নেই। রাঙামাটি পর্যটন মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানান, দেশে করোনাকাল শুরু থেকে বন্ধ রাঙামাটিতে পর্যটক আসা। মাঝখানে একটু স্বাভাবিক হলেও গেল চার মাস ধরে একেবারে বন্ধ পর্যটন কেন্দ্র। তাই পর্যটন কমপ্লেক্সের কর্মচারীদেরও বেতন ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সে ৪৯ জন কর্মচারী রয়েছে। তাদের প্রতি মাসে বেতন দিতে হয় প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা। অন্যদিকে ঘাটতি রয়েছে ১ কোটি টাকা। তাই দিন বাড়লে নানামুখী শঙ্কাও বেড়ে যায়। এবার ঈদ উৎসবেও পর্যটক আসেনি পাহাড়ে। নেই কোনো বুকিংও। করোনার দুর্যোগ না কাটা পর্যন্ত স্বাভাবিক হবে না পর্যটক ব্যবসা। প্রসঙ্গত, রাঙামাটি জেলাজুড়ে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় ও উপভোগ্য স্থান। গড়ে উঠেছে অনেক দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট। এখন ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের বেড়ানোর বড় সুযোগ ছিল ঈদের ছুটি। রাঙামাটির মূল শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের হলিডে কমপ্লেক্স। সেখানে রয়েছে দৃষ্টিকাড়া ঝুলন্ত ব্রিজ, কটেজ ও মোটেল। পর্যটন নগরী রাঙামাটিতে পর্যটকদের আনন্দ ও মনোরঞ্জন জোগানোর অসংখ্য নৈসর্গিক আবেশ ও দর্শনীয় অনেক স্থান-স্পট রয়েছে। সরকারি পর্যটন মোটেল ছাড়াও ডিসি বাংলো, পেদাটিংটিং, সুবলং ঝরনা ও পর্যটন স্পট, টুকটুক ইকো ভিলেজ, গিরিশোভা ভাসমান রেস্তোরাঁ, পৌর পার্ক, সুখী নীলগঞ্জ, উপজাতীয় জাদুঘর, রাজবন বিহার ইত্যাদি।

 চাকমা রাজার বাড়ি, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফের স্মৃতিসৌধসহ মনোরম ও নয়নাভিরাম স্পট-স্থাপনা সত্যিই যে কোনো পর্যটককে সহজেই কাছে টানে। শিহরিত করে তোলে স্বচ্ছ কাপ্তাই হ্রদের জলে নৌবিহারের মতো রোমাঞ্চকর নৌভ্রমণ। আর এসব পর্যটন স্পটগুলো এখন একেবারেই ফাঁকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর