শিরোনাম
সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে

করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিপর্যয় ঘটেছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সচল রয়েছে। করোনাসহ নানান সংকটের মধ্যে দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা সচল থাকায় রাজস্ব আয় অব্যাহত রয়েছে। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলছে আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রম। জানা গেছে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। নানা সংকটের মধ্যদিয়েও এ বন্দরে রাজস্ব আদায় হয় ৬১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুণ রাজস্ব আয় হয়েছে এই বন্দরে। বাংলাবান্ধা বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, এর আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৩১ কোটি ৫৯ লাখ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলে আদায় করা হয় ২১ কোটি ৬৪ লাখ ৩ হাজার টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে নির্ধারণ করা হয় ৩৬ কোটি ৭৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮১১ টাকা, আদায় হয় ২৫ কোটি ৭৩ হাজার টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৬ কোটি টাকা, আদায় হয় ১৮ কোটি টাকা ১৯৯৭ সালে ১ সেপ্টেম্বর নেপাল, ২০১১ সালে ভারতের সঙ্গে এবং শুরু হয় ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি ভুটান  থেকে পাথর আমদানির মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্থলবন্দরের সঙ্গে চতুর্দেশীয় ব্যবসা কার্যক্রম চলমান। বিপুল পরিমাণ রাজস্বও আয় হচ্ছে এই বন্দরে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে ৩৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে বন্দরটি আয় করে ৪৩ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় ৬০ কোটি টাকা। আদায় করা হয় ৩৫  কোটি ৪০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ২২ কোটি ৩৬ লাখ ৬ হাজার নির্ধারণ হলেও আদায় হয় ২৬ কোটি ৯৩ লাখ ৫৯ হাজার ২৩৯ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছর ৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা থাকলেও আদায় হয়েছিল ১৩  কোটি টাকা। এই অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছিল। ২০১১-১২ সালে ৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ১ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছিল। ১৯৭৪ সালে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে সম্পাদিত ঐতিহাসিক মৈত্রী চুক্তির মাধ্যমে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের সম্ভাবনার বীজ রোপিত হয়। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন সরকারের শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং নেপাল সরকারের কৃষিমন্ত্রী চক্রপ্রসাদ বাসতুলা বাংলাবান্ধা বন্দরে বাংলাদেশ-নেপাল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের উদ্বোধন করেন। ফলশ্রুতিতে ২০১১ সালে ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশের বাংলাবান্ধায় বাংলাদেশ সরকারের কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং ভারতের ফুলবাড়ীতে ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি নিজ নিজ  দেশে বন্দরের কার্যক্রম তথা দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আলোকে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলের উদ্বোধন করেন। এ স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হচ্ছে পাট ও পাটজাত পণ্য, আলু, ব্যাটারি,  কোমল পানীয়, গার্মেন্টস সামগ্রী, ক্যাপ, হ্যাঙ্গার, সাবান, বিস্কুট, চানাচুর, জুস, কাচ, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন দ্রব্য। আমদানি করা হচ্ছে পাথর, মেশিনারিজ, ডাল, চাল, ভুট্টা, প্লাষ্টিক দানা, আদাসহ বিভিন্ন পণ্য।

 ফলে  বাংলাবান্ধা সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম জানান, মহামারী করোনার কারণে উচ্চ শুল্কহারের পণ্য আমদানি কমে গেছে। বন্দরের অবকাঠামো এখনো আধুনিক মানের হয়নি। ভালো অবকাঠামো গড়ে উঠলে আরও বেশি রাজস্ব আদায় হবে। বাংলাবান্ধা আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি আব্দুল লতিফ তারিন ও সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই খুদা মিলন জানান, দেশের একমাত্র সম্ভাবনাময় চারদেশীয় স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা। এ বন্দরের তিন দেশের সঙ্গে ভৌগোলিক অবস্থান কাছাকাছি হওয়ার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এই মহামারী করোনার মধ্যেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে দ্বিগুণ রাজস্ব আয় হয়েছে। বন্দরের অবকাঠামোসহ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য মহাপরিকল্পনা করা দরকার। এই বন্দর দিয়ে শত শত কোটি রাজস্ব আয় সম্ভব। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের সহকারী কমিশনার মবিন উল ইসলাম জানান, ‘করোনাকালীন সময়ে স্থলবন্দরে সব স্তরের কর্মকর্তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। কর্মকর্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও এখানকার ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই এ স্থলবন্দরটি অপার সম্ভাবনাময়। ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য কার্যক্রম শুরু হলে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর হিসেবে স্থান পাবে এবং জাতীয় রাজস্ব আয়ে যোগ হবে নতুনমাত্রা।

সর্বশেষ খবর