সোমবার, ২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

শ্রীমঙ্গলে সাপের উপদ্রব

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

শ্রীমঙ্গলে সাপের উপদ্রব

পাহাড় ও হাওর বেষ্টিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা। এ উপজেলায় রয়েছে দেশের অন্যতম বন্যপ্রাণীদের অভয়াশ্রম লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের কিছু অংশ। রয়েছে ৪৩টি চা বাগান। এসব চা বাগানে রয়েছে ঘন বন-জঙ্গল। প্রায় প্রতিদিনই এসব বনাঞ্চল থেকে বেরিয়ে পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ। ঢুকে পড়ছে মানুষের বাড়ির আঙিনা, বসতঘর ও দোকান ঘরে। সাপের কামড়ে ঘটছে মানুষের মৃত্যু। কিন্তু সাপের উপদ্রব বেড়ে গেলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপে কাটা রোগীর কোনো ওষুধ নেই। এখান থেকে রোগীকে রেফার্ড করে দেওয়া হয় সদর হাসপাতালে। আর সদর হাসপাতাল থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে। আর এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে রোগীর সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে বিষক্রিয়া। তাই কখনো গাড়িতে, কখনোবা সিলেট পৌঁছার পর পরই মৃত্যু হয় সাপে কাটা অনেক রোগীর। সর্বশেষ গত ১৮ জুলাই বিষধর সাপে কামড় দেয় জেরিন চা বাগানের শ্রমিক সুমন মিয়াকে। এ ছাড়া গত ২৪ জুলাই সদর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের প্রীতম দেব ও গত ৫ জুলাই এম আর খান চা বাগানের প্রবাসী নেপালীকে সাপে কামড় দেয়। তাদের মধ্য সিলেট নেওয়ার পথে গাড়িতেই মারা যায় সুমন। আর অন্য দুজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন থেকে জানা যায়, গত এক বছরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৫০টি সাপ উদ্ধার করা হয়। আর শুধু চলতি মাসে ১০টি সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে শহরের সুরভী পাড়া থেকে একটি অজগর, আখতাপাড়া সুরোজ আলীর বাড়ি ও ডলুবাড়ী এলাকায় কসমেটিক্স দোকান থেকে দুটি দাঁড়াশ, জেরিন চা বাগান থেকে একটি কালনাগিনী ও দুটি দাঁড়াশ, পৌরসভার কাঁচা বাজার থেকে মৃদু বিষধর দুটি আইড ক্যাট স্নেক ও কমলগঞ্জের তিলকপুর গ্রামে একটি গোয়ালঘর থকে ১৫টি ডিমসহ একটি বিষধর গোখরা সাপ উদ্ধার করা হয়। সেবা ফাউন্ডেশন পরিচালক সজল দেব বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া সাপগুলো আমরা আবার বনে ছেড়ে দিই।’

বন বিভাগ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে ৭৯ প্রজাতি সাপের ২৭টি প্রজাতিই বিষধর। যেগুলোর বেশি ভাগের অস্তিত্ব লাউয়াছড়া বনে রয়েছে। এ বনে আছে অজগর, কিং কোবরা, দাঁড়াশ, আইড ক্যাট স্নেক, সবুজ বোড়া, লাউডগা, কালনাগিনী, দুধরাজ, ঢোঁড়া, হিমালয়ান ঢোঁড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিষধর, মৃদু বিষধর ও নির্বিষ সাপ। বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ রেঞ্জ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘সাপে কাটা রোগীকে খুব দ্রুত চিকিৎসা দিতে হয়। দেরি হলে রোগীর শরীরে বিষ ছড়িয়ে পড়ে, এতে ওই রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তাই মৌলভীবাজারে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকাটা খুবই প্রয়োজন।’ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সিতেশ রঞ্জন দেব বলেন, ‘মৌলভীবাজারে সাপে কাটা রোগীর কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। আমরা অনেকবার সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’  শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের এখানে অ্যান্টিভেনম নেই। তাই সাপে কাটা রোগীকে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই।’ মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিনেন্দু ভৌমিক বলেন, ‘সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসাব্যবস্থা মেডিকেল কলেজ পর্যায়ে রয়েছে। সদরে নেই। তাছাড়া এই অ্যান্টিভেনম দেওয়ার বেশ কৌশল রয়েছে। এর জন্য দক্ষ জনবল প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ ছাড়া এটি দেওয়া সম্ভব নয়। ক্ষেত্র বিশেষে রোগীর আইসিইউ লাগে।’

সর্বশেষ খবর