মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

চালু হয়নি কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ, অচল আইসিইউ

হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র না থাকায় সংকটাপন্ন করোনা রোগীদের ঢাকা কিংবা রাজশাহীতে নিতে হচ্ছে

পাবনা প্রতিনিধি

চালু হয়নি কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ, অচল আইসিইউ

সারা দেশে আইসিইউ সংকটে করোনা রোগীদের চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। পাবনায় কোনো হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) না থাকায় সংকটাপন্ন করোনা রোগীদের ঢাকা কিংবা রাজশাহীতে নিতে হচ্ছে। কখনো হাসপাতালে নেওয়ার পথে কিংবা বড় শহরগুলোতে আইসিইউ না পেয়ে মারা যাচ্ছেন এসব রোগী। অথচ প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রাংশ থাকার পরও কেবল কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু না হওয়ায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে অচল পড়ে আছে চার শয্যার আইসিইউ ইউনিট। কাজে আসছে না ভেন্টিলেটর, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাসহ মুমূূর্ষু করোনা রোগীদের চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। এতে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পাবনা জেনারেল হাসপাতালে সংকটাপন্ন করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পাবনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে হাসপাতালটিতে আইসিইউ ইউনিট চালুর জন্য ৪টি শয্যা ও ৪টি কার্ডিয়াক মনিটর আসে। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় অক্সিজেনের সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য দরপত্র হয়। জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি। এখনো অক্সিজেন প্লান্ট নির্মাণের কাজই শুরু হয়নি। তবে ওয়ার্ডগুলোতে পাইপলাইন টানা এবং তরল অক্সিজেন ট্যাংকারের কাজ শেষ হওয়ায় অক্সিজেন পাওয়া গেলেই কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব। এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে তরল অক্সিজেন বরাদ্দ না পাওয়ায় অক্সিজেন ট্যাংকারের মাধ্যমেও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ শুরু করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পাবনা জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রুহুল হোসেন জানান, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহের জন্য লিকুইড অক্সিজেন কাঠামো নির্মাণের কাজ গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে। তবে, লিকুইড অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় এটি চালু করা যাচ্ছে না। প্রচেষ্টায় হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে বড় সিলিন্ডার সংযোগ দিয়ে মেডিফোল্ড পদ্ধতিতে হাই ফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয় বলেও জানান তিনি। তরল অক্সিজেনের মাধ্যমে কবে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ শুরু হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। স্পেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাবনা হাসপাতালে লিকুইড ট্যাংকার ও পাইপলাইন সংযোগের কাজ শেষ। তবে যেসব হাসপাতালে অক্সিজেন ট্যাংকারে সরবরাহ চালু আছে তাদেরই আমরা পর্যাপ্ত তরল অক্সিজেন দিতে পারছি না। পাবনায় কবে চালু করা যাবে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. সালেহ মোহাম্মদ আলী বলেন, করোনা রোগীদের সেবা দিতে হাসপাতালে ১৫০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছে। করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে অতিরিক্ত ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আইসিইউ পরিচালনায় সহায়তা দিতে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে এসেছে। তাদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পরও কেবল কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু না থাকায় আমরা সংকটাপন্ন রোগীদের আইসিইউ, এইচডিইউ সুবিধা দিতে পারছি না। পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, তরল অক্সিজেন বরাদ্দ পেলে পাবনায় করোনা রোগীদের সর্বোচ্চ আধুনিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। আমরা দ্রুততম সময়ে তরল অক্সিজেন বরাদ্দ চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি চলতি সপ্তাহেই তরল অক্সিজেন পাওয়া যাবে।

এদিকে, গত রবিবার ১০ হাজার ছাড়িয়েছে পাবনায় করোনা রোগীর সংখ্যা। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার পর্যন্ত মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ১০৮ জন। এদের মধ্যে ৫ হাজার ৪১৫ জনই শনাক্ত হয়েছেন জুলাই মাসে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী জুলাই মাসেই মোট সংক্রমিত রোগীর ৫০ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে।   

সর্বশেষ খবর