বুধবার, ৪ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

আইসিটি শিক্ষায় আলোকিত বগুড়া

৫০ হাজার শিক্ষার্থীকে আইসিটি শিক্ষায় দক্ষ করে তুলেছে। দেশের জন্য এটি একটি মাইলফলক

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

আইসিটি শিক্ষায় আলোকিত বগুড়া

আইসিটি শিক্ষায় আলো ছড়িয়েছে বগুড়ায় প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি (নেকটার)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের আওতায় দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার শিক্ষার্থীকে আইসিটি শিক্ষায় দক্ষ করে তুলেছে। দেশের জন্য এটি একটি মাইলফলক। এই প্রতিষ্ঠানে ফ্রিল্যান্সিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব পেজ ডিজাইন, অফিস অ্যাপ্লিকেশনের নানামুখী কাজ দিয়ে অসংখ্য তরুণ বেকারত্ব দূর করে হয়েছেন উদ্যোক্তা। জানা যায়, ১৯৮৩ সালের ১৩ মে নট্রামস্ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৪ সালের ১ জুলাই থেকে সরকারিভাবে কার্যক্রম শুরু করে। শুরুতে প্রতিষ্ঠানটি চালু ছিল বহুভাষী সাঁটলিপি ও টাইপরাইটিং প্রশিক্ষণ। পরবর্তীতে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নট্রামস্ বিলুপ্ত করে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি (নেকটার) হিসেবে। ১৯৮৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিভিন্ন মেয়াদে এখন পর্যন্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে ৫৩ হাজার ৫৫৫ জন। প্রত্যেকেই তথ্য-প্রযুক্তির বিভিন্ন খাতে দক্ষতা অর্জন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই শিক্ষার আলো প্রসারিত করছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণাও চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানটিতে সংযোজিত হয়েছে রোবট ব্লুবেরি এবং থ্রিডি প্রিন্টার। রোবট ব্লুবেরি যা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে রাস্পবেরি পাই, পাইথন প্রোগামিং, ডিসি গিয়ার মটর, স্টেপার মটর, সার্ভো মটর, মটর কন্ট্রোল ড্রাইভার, সোনার সেন্সর, মোশন সেন্সর ইত্যাদি। রোবটটি জাতীয় সংগীত পরিবেশন, অভ্যর্থনা প্রদান এবং কবিতা আবৃত্তি করতে পারে। নেকটার বগুড়ার উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মাহমুদুর রহমান জানান, নেকটার বগুড়া থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ১৬ হাজার ৮২ জন প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে ৬ মাস মেয়াদী এ্যাডভান্সড্ সার্টিফিকেট কোর্স অন কম্পিউটার ট্রেনিং বিষয়ে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় ১২ হাজার ৪’৪২ জন মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি স্কুল ও মাদ্রাসা, এসএসসি ভোকেশনাল এবং এইচএসসি বিএম শিক্ষকগণ ৩০ দিন মেয়াদি আইসিটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। প্রশিক্ষণের মধ্যে রয়েছে সি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স, স্পেশাল বেসিক লার্নিং কম্পিউটার কোর্স, গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স, ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ফান্ডামেন্টাল অব ওয়েব পেজ ডিজাইন কোর্স, ফান্ডামেন্টাল অব আইসিটি, কম্পিউটার এবং অফিস অ্যাপ্লিকেশন কোর্স, শর্টহ্যান্ড প্রশিক্ষণ কোর্স, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট কোর্স, ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি। শুধু সাধারণ শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষকরাই নয় নেকটার থেকে আইসিটি শিক্ষায় প্রশিক্ষণ অর্জন করেছেন ২৫ জন জুডিশিয়াল (সাব জজ) কর্মকর্তা, ১১৯ জন বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের কর্মকর্তা, বিসিএস (প্রশাসন) এর ২৪২ জন কর্মকর্তা, শিক্ষাসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের ৩৮৭ জন কর্মকর্তা, ১০৯ জন পুলিশ কর্মকর্তা, ইন-সার্ভিস (আর্মি) প্রশিক্ষণ ৪০০ জন, বিসিএস (হিসাব) ৬০ জন, ইনসেনটিভ ট্রেনিং কোর্স (ফরেনার) ৪১ জন, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের ৩০ জন কর্মকর্তা। করোনাকালেও প্রতিষ্ঠান থেকে ভার্চুয়ালি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে বিভিন্ন মেয়াদে ২০২০-২১ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত নেকটার বগুড়া থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন ২ হাজার ৯১২ জন।  প্রতিষ্ঠানটির ২০১৮ সালের প্রশিক্ষণার্থী নাসির আহম্মেদ জানান, নেকটার বগুড়া থেকে তিনি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা সে নিয়মিত চর্চা করে আজ ফ্রিল্যান্সিং-এর কাজের মাধ্যমে প্রতিমাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা রোজগার করছেন। বগুড়ার পরিচালক মো. শাফিউল ইসলাম (উপ-সচিব) জানান, ৪র্থ শিল্প বিপ্লবকে সামনে রেখে নেকটার বগুড়ায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন নতুন কোর্স সংযোজন করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আইসিটিতে দক্ষ প্রশিক্ষকদেরও। ভবিষ্যতেও বগুড়া নেকটার আইসিটি শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে নিজেদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তনের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাবে প্রতিষ্ঠনটি।

সর্বশেষ খবর