বুধবার, ৪ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

দিনাজপুরে আকাশের দিকে তাকিয়ে পাট চাষিরা

দিনাজপুর প্রতিনিধি

দিনাজপুরে আকাশের দিকে তাকিয়ে পাট চাষিরা

আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল। চারদিকে বর্ষার পানি থই থই করার কথা। অথচ ভরা এ বর্ষা মৌসুমের আষাঢ় মাস পেরিয়ে শ্রাবণ মাসেও পর্যাপ্ত বৃষ্টির দেখা নেই। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় খেতে পানি নেই। আবহাওয়ার এমন বৈরিতায় বৃষ্টির অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন পাট চাষিরা। কাক্সিক্ষত বৃষ্টির অভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে। জেলার কয়েক উপজেলায় বেশি পাট উৎপাদন হয়। এসব এলাকায় বৃষ্টির অভাবে নদীনালা, খালবিল, পুকুরসহ জলাশয়গুলো পানিশূন্য থাকায় কৃষকরা পাট জাগ দিতে পারছেন না। অনেক কৃষক পাট কেটে জমিতেই ফেলে রেখেছেন। আবার কৃষকরা পানির অভাবে তা পাট কাটতে বিলম্ব করছেন। খেতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন তারা। অনেকে জমি থেকে পাট কেটে আঁশ তোলার জন্য নদী, খাল ও ডোবার পানিতে প্রক্রিয়াজাতের ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু পাটের প্রক্রিয়াজাতকরণে বা পাট জাগ দিতে বাদ সেধেছে প্রকৃতি। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চাষিরা পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায়। তাই অনেক কৃষক পাট জাগ দিয়ে তাতে শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি সেচ দিচ্ছেন। চাষিরা জানায়, বিগত কয়েক বছর পাটের বাজারদর ভালো না থাকায় এটি চাষ করে লোকসান গুনতে হয় চাষিদের। কিন্তু বর্তমানে দেশে পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধিতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়ার ফলে আবারও সুদিন ফিরে এসেছে পাট চাষিদের। এ বছর পাটের বাজার ভালো থাকায় আশানুরূপ দাম পাবেন বলে মনে করছেন তারা। চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের জোত সাতনালা গ্রামের পাট চাষি আলিমদ্দিন জানান, তিনি দেড় বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। চলতি বছর প্রতি বিঘা জমিতে পাট উৎপাদনের জন্য অন্তত ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ পাট ২৫০০-২৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফতেজংপুর ইউনিয়নের পাট চাষি মজিবর রহমান বলেন, চলতি বছর পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চিন্তায় আছি। অনেকেই বৃষ্টির জন্য আকাশের দিকে তাঁকিয়ে আছেন। তারপরেও পর্যাপ্ত বৃৃষ্টি হলে পাট কাটা, জাগ দেওয়া, আঁশ ছড়ানো, পাট ও পাটকাঠি শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করবেন চাষিরা। ইসবপুর ইউনিয়নের বিন্যাকুড়ি গ্রামের ইয়াকুব আলী বলেন, এ সময় আমনধান রোপণ ও পাট জাগ দেওয়ার জন্য বৃষ্টির পানির খুবই প্রয়োজন। এ বছর ভরা বর্ষাকালেও তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। যেসব পাট কেটে রেখেছেন সেগুলোও রোদে শুকিয়ে লালচে রং ধারণ করছে। অনেকেই জমিতেই পাট না কেটে রেখে দিয়েছেন।

চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি অফিসার জোহরা সুলতানা বলেন, চলতি মৌসুমে চিরিরবন্দরে পাটের আবাদ ভালো হয়েছে। এখন পাট কাটার উপযুক্ত সময়। অনেক চাষি পাট কাটা শুরু করেছেন। তবে কৃষকরা অপেক্ষায় আছেন, বৃষ্টি হলে তারা পুরোদমে পাট কাটা শুরু করবেন। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত না হলে রিবন পদ্ধতিতে পাট পচালে অল্প খরচে তা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে পাটের মানও ভালো হয়।

উল্লেখ্য, চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি বছর চিরিরবন্দর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ৬২৯ হেক্টর জমিতে পাটচাষ হয়েছে। এর মধ্যে তোষাজাত ৬১৭ হেক্টর এবং দেশিজাতের ১২ হেক্টর জমি রয়েছে।

সর্বশেষ খবর