রবিবার, ৮ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ফরিদপুরে মধুমতির ভাঙন

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

ফরিদপুরে মধুমতির ভাঙন

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ও টগরবন্দ ইউনিয়নে মধুমতি নদীর তীরবর্তী এলাকার ভাঙন ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। ইতিমধ্যেই বিলীন হয়েছে কয়েক শ বসতবাড়ি, ফসলি, পাকা সড়ক, গুচ্ছগ্রাম, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙনের মুখে রয়েছে স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা, বাজার, ফলের বাগানসহ কয়েক শ বসতবাড়ি। ইতিমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে আলফাডাঙ্গার সঙ্গে গোপালপুর ইউনিয়নের যোগাযোগের প্রধান পাকা সড়কটির প্রায় ৪০০ মিটার। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সড়কটির বেশির ভাগ অংশ। সাম্প্রতিক সময়ে মধুমতি নদীর ভাঙন এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, অনেকেই ঘর বাড়ি ও গাছপালা কেটে নেওয়ারও সময় পাচ্ছে না। এদিকে, নদী ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তরফ থেকে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হলেও তা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে মধুমতি নদী থেকে অবৈধ এবং অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে গত বছর থেকে আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ও টগরবন্দ ইউনিয়নে ভাঙন শুরু হয়। গত বছর ভাঙনের তীব্রতা কম থাকলেও এ বছর নদীর পানি বাড়তে থাকায় ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে গোপালপুর ও টরগবন্দ ইউনিয়নের বাজড়া, চর আজমপুর, চরডাঙ্গা, চাপুলিয়া, চরধানাইর, শিকিপাড়া, চর চাপুলিয়া গ্রামের কয়েক শ বসতবাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদ নদীতে বিলীন হয়। ইতিমধ্যেই নদীতে বিলীন হয়েছে গুচ্ছগ্রামের ১২৫টি বাড়ি। ভাঙনের কারণে বিলীন হয়েছে ৪০০ মিটার পাকা সড়ক। আলফাডাঙ্গা উপজেলার সঙ্গে গোপালপুর, টগরবন্দ, পাচুরিয়া, বানা ইউনিয়নের চলাচলের প্রধান সড়কটি বিলীন হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। বিকল্প পথে এসব ইউনিয়নের মানুষ চলাচল করছে। বর্তমানে নদীভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে গোপালপুর ও টগরবন্দ ইউনিয়নের কয়েকশ বসতবাড়ি, বাজরা পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদ, চরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক স্থাপনা। গত কয়েকদিন ধরে গোপালপুর ইউনিয়নে ভাঙনের তীব্রতা কিছুটা কমলেও টগরবন্দ ইউনিয়নে ভাঙন বেড়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে এ ইউনিয়নের কমপক্ষে ২-৩০টি বাড়ি বিলীন হয়েছে নদীতে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, গত বছর থেকে ভাঙনের তীব্রতা বাড়লেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ বছর ভাঙনের তীব্রতা আরও বেশি। গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হলেও ভাঙন ঠেকাতে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। সরেজমিন শুক্রবার ভাঙন কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ভাঙন এলাকার মানুষের মধ্যে আহাজারি চলছে। অনেকেই ভাঙনের কারণে আতংকিত হয়ে পড়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের মাঝে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ।

সেই ক্ষোভের বহির্প্রকাশ দেখা গেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে গেলে। সেখানে থাকা বেশকিছু নারী পুরুষ ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনজুর হোসেন বুলবুলের উপস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা নদীভাঙন ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করেন। পরে সংসদ সদস্য ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন। টগরবন্দ ইউনিয়নের কয়েকজন নারী পুরুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টগরবন্দ ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রামে ভাঙনের তীব্রতা বেশি হলেও সেখানে কোনো বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে না। গোপালপুর ইউনিয়নের একটি স্কুল রক্ষার জন্য সেখানেই বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক ক্ষোভের। নদী ভাঙন ঠেকাতে দ্রুতই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ভাঙন কবলিত এলাকার হাজারো মানুষ। নদী ভাঙনরোধে গত কয়েকদিন ধরে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু শুধু বালুর বস্তা ফেলে তীব্র আকার ধারণ করা ভাঙন কোনোমতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, মধুমতি নদীর ভাঙন ঠেকাতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থায়ী বাঁধের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব পাস হলে কাজ শুরু করা যাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর