রবিবার, ৮ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

নারায়ণগঞ্জ করোনা হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জ করোনা হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা

অব্যবস্থাপনা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলছে নারায়ণগঞ্জের একমাত্র কভিড হাসপাতাল। সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট ও সাড়ে তিন শর বেশি সিলিন্ডার থাকলেও রোগীরা বাইরে থেকে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে ভাড়া আনছেন অক্সিজেন। শুধু সিলিন্ডারই নয়, অক্সিজেন সিলিন্ডারের মিটারটি পর্যন্ত কিনতে হচ্ছে এমন অভিযোগ অনেক রোগীর। টিকা নিতে আসা কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে অনেকেই দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন করোনা পরীক্ষার লাইনে আর করোনা পরীক্ষা করাতে আসারা দাঁড়াচ্ছেন টিকার লাইনে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর অর্ধেকই চলে গেছেন অবসরে। আর যারা আছেন তারা পঞ্চাশোর্ধ্ব। আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া ৪০ জন কর্মচারী বেতন পাচ্ছেন না দুই মাস ধরে। সরকারি নিয়মমাফিক দুপুরে সুপার (তত্ত্বাবধায়ক) ডা. আবুল বাশার হাসপাতাল ত্যাগের পর বেশির ভাগ চিকিৎসকই ডিউটি রোস্টারে উপস্থিত থাকলেও দেখা মেলে না করোনা ওয়ার্ডে। জানা গেছে, করোনা হাসপাতালের অন্যতম প্রধান বিষয়টি যেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সেখানে এ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের বাথরুমগুলোয় উঁকি দিলে যে কারোরই গা গুলিয়ে আসবে। শুধু বাথরুম নয় হাসপাতালের কম্পাউন্ডে কিংবা অভ্যন্তরে অব্যবহৃত অলিগলি-কোণে চোখে পড়বে রোগীদের ব্যবহৃত চাদর, বালিশের কভার, চিকিৎসাসামগ্রীর স্তূপ। এদিকে হাসপাতালের চরম অব্যবস্থাপনার ভয়ংকর চিত্রটির দেখা মেলে নিচতলায়ও। যেখানে প্রতিদিন টিকা নিতে আসছেন কয়েক হাজার মানুষ আর কভিড টেস্ট করাতে উপসর্গ নিয়ে আসছেন ৫ শতাধিক রোগী। প্রথম ডোজের পাশাপাশি দ্বিতীয় ডোজ নিতে আসা আর কভিড টেস্টের মোট তিনটি লাইন হলেও বোঝার উপায় নেই কে কোন লাইনে দাঁড়িয়েছেন। স্বাস্থ্যবিধির বালাই দূরে থাক, উল্টো করোনা পজিটিভরাও ভুল করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন টিকা নিতে আসাদের লাইনে। আবার টিকা নিতে আসা লোকজন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে থাকছেন কভিড টেস্টের লাইনে। যখন বুঝে উঠছেন তারা ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে যাচ্ছে।

রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করে (নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে) জানান, একবার অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়ার পর কখনো ৬ ঘণ্টা কখনো এক দিন পেরিয়ে যায়, অক্সিজেনের দেখা মেলে না। কখনো সিলিন্ডার মিললেও মিটার দেওয়া হয় না। ফলে সিলিন্ডারের মিটারটি পর্যন্ত বাইরে থেকে কিনছেন তারা। কয়েকজন সংকটাপন্ন রোগীর স্বজন জানালেন, চিকিৎসাসেবা যা পাচ্ছি তা নার্সেরাই করছেন। ডাক্তারদের দেখা পাওয়া এখানে কষ্টকর। তারা বলেন, রাতের বেলায় ডাক্তার পাওয়া যাবে না এমনটাই ধরে নিয়ে আছি এখানে। অক্সিজেনের ইনটেক সিলিন্ডার সাজিয়ে রাখা হয়েছে অথচ আমরা রোগীদের জন্য অক্সিজেন পাচ্ছি না। বাইরে থেকে একটি সিলিন্ডার আনতে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ডিপোজিট রাখতে হচ্ছে। প্রতিবার রিফিল আর সিলিন্ডার ভাড়া লাগছে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। অথচ শুনেছি দোতলায় ২৫টি বেডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন দেওয়া আছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘দুই বছর ধরে শুধু নাই আর নাই এ হাসপাতালে। ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়দের থাকার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে খাওয়ার ব্যবস্থা পর্যন্ত করে দিয়েছেন স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমান। তিনি নিজের টাকায় ১১৮টি সিসি ক্যামেরা দিয়েছিলেন হাসপাতালে, কিন্তু সেগুলো রহস্যজনক কারণে অকেজো করে রাখা হয়েছে।’ তিনি আক্ষেপ জানিয়ে বলেন, ‘পুরো হাসপাতালটির নিয়ন্ত্রণ যেন কোনো মাফিয়া চক্রের হাতে চলে গেছে।’ হাসপাতালের সুপার (তত্ত্বাবধায়ক) ডা. আবুল বাশার বলেন, ‘রোগীর তুলনায় অক্সিজেন সিলিন্ডার পর্যাপ্ত থাকার পাশাপাশি সেন্ট্রাল অক্সিজেনে ১০টি আইসিইউ বেডের পাশাপাশি ২৫টি আইসোলেশন বেডে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কেউ বাইরে থেকে অক্সিজেন আনলে তা হাসপাতালের আইন পরিপন্থী।’ স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের লোকবলের অভাবে তা করা সম্ভব হচ্ছে না। বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলেও লোকবল বাড়ানো যাচ্ছে না। তাই পরিচ্ছন্নতা বা ব্যবস্থাপনায় আমাদের চরম বেগ পেতে হচ্ছে।’ তবে চিকিৎসকরা নিয়মমতো ডিউটি করছেন বলে দাবি করেন তিনি।

 

সর্বশেষ খবর