বুধবার, ২৫ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

পটুয়াখালীতে ইলিশের আকাল

সঞ্জয় দাস লিটু, পটুয়াখালী

পটুয়াখালীতে ইলিশের আকাল

ভরা মৌসুম চললেও পটুয়াখালীর মৎস্য বন্দরগুলোতে নেই রুপালি ইলিশের বেচাকেনার সরগরম। বার বার সাগরে নেমেও জেলেদের জালে কাক্সিক্ষত ইলিশ না পাওয়ায় হতাশ হয়ে মৎস্য বন্দরে ফিরছে জেলেরা। সাগর কিংবা নদীতে জেলেদের জালে কোথাও দেখা মিলছে না ইলিশ। কিছু কিছু মাছধরা ট্রলারে সামান্য ইলিশের দেখা মিললেও অনেক আড়ত মালিকরা পড়েছেন লোকসানে। ইলিশ না পাওয়ায় বিগত দিনের দাদন আর ধার দেনা পরিশোধ কি ভাবে করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম জেলেদের। সব মিলিয়ে জেলে পরিবারের দৈনন্দিন জীবনযাপন এখন অনেকটাই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৎস্য বিভাগের দাবি অনাবৃষ্টি আর পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততা থাকায় ইলিশ আসছে না কুয়াকাটা সংলগ্ন সাগর কিংবা গভীর সাগরে। তবে কিছুটা সময় পরে হলেও সাগরে ইলিশ পাওয়া যাবে বলেও আশা করছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা। জানা গেছে, দেশের সমুদ্রসীমায় মাছের উৎপাদন বাড়াতে এ বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মোট ৬৫ দিন সমুদ্র এলাকায় সব ধরনের মাছ এবং চিংড়ি শিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এর আগে ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২১ দিন সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এ ছাড়া ১ নভেম্বর থেকে ৮ মাস চলে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান। এর পরেও এবার ইলিশের ভরা মৌসুমে নদ-নদী, সাগর মোহনায় কিংবা গভীর সাগরে তেমন দেখা মিলছে না জেলেদের জালে ইলিশ। জানা যায়, জেলায় অন্তত ৭০ হাজার জেলে সরাসরি সাগর আর নদীতে মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া বরফ কল, মাছ প্রক্রিয়াজাত করন, জাল তৈরি, মেরামতসহ অনুসাঙ্গিক কাজে সব মিলিয়ে লাখো পরিবার সরাসরি এসব কাজে জড়িত। আর সাগরে মাছ না থাকায় এসব পরিবার গুলোকেও কষ্ট করে দিন যাপন করতে হচ্ছে। জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, গত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে পটুয়াখালীতে ৬৪ হাজার মেট্রিকটন এবং ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ৬৭ হাজার মেট্রিকটন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। সেই হিসেবে এবার ইলিশের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাওয়ার কথা তবে বাস্তব চিত্র একেবারে ভিন্ন। দীর্ঘদিন এ পেশায় থাকা মহিপুরের জেলে শ্রমিক সবুজ মিয়া জানান, পূবাল বাতাস না ছাড়া পর্যন্ত বড় সাইজের ইলিশ আমাদের সাগরে আসবে না। যেহেতু এখন পর্যন্ত পূবাল বাতাস নাই সেহেতু ইলিশ এখন কক্সবাজার আর বার্মার ওদিকে পাওয়া যাচ্ছে। আলীপুর মৎস্য বন্দরের এফবি আল-হামিদ এর মাঝি ইদ্রিস মিয়া জানান, সাগরে মাছ নেই, যাও পাওয়া যাচ্ছে তা সাইজে ছোট। এ মৌসুমে অন্তত ১০/১২ বার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ বাজার নিয়ে সাগরে নেমেছি। একবার ২৪ হাজার টাকার বাজার নিয়ে সাগরে নেমে এসে ৩ হাজার ৩০০ টাকার মাছ বিক্রি করেছি। আর বাকি কয়বার যে ইলিশ পেয়েছি তাতে দুবার খাবার খোরাকিসহ খরচ টাকা বিক্রি করেছি। দুবার সমান সমান। এ পর্যন্ত লোকসানে আছি। এরপর যদি কিছু মাছ আল্লায় দেয় তহন আবার অবরোধ দেবে সরকার। হে সময় ইন্ডিয়ার বোটে মাছ ধইররা নিয়া যাইবে। ট্রলার মালিক মো. মনিরুল ইসলাম জানান, তার ৩টি মাছ ধরা ট্রলার অন্তত ৯বার সাগরে নেমেছে ইলিশ ধরতে। কিন্তু ২টি ট্রলারে কিছু ইলিশ পেয়েছে আর বাকিগুলো সবই লোকসান গুনতে হয়েছে। যাও কিছু ইলিশ পাওয়া যায় তাও আবার সাইজে ছোট। যারা গভীর সাগরে মাছ শিকার করে তারা যে মাছ পাচ্ছে তা দিয়ে তাদের জ্বালানি এবং অনান্য খরচ তুলতেই কষ্ট হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর