বুধবার, ২৫ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

পদ্মা-যমুনায় পানি বৃদ্ধি

পাবনায় ডুবছে সবজি খেত

পাবনা প্রতিনিধি

পদ্মা-যমুনায় পানি বৃদ্ধি

পাবনায় পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধিতে নদী পাড়ের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও সবজি খেত তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। পাশাপাশি নদী পাড়ের বেশ কিছু গ্রামে বাড়িঘরেও পানি প্রবেশ করেছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে, পাবনায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রের গতকাল সকালের তথ্য অনুযায়ী- পাবনায় যমুনা ও বড়াল নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। বিপৎসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মা নদীর পানি। পাবনা পানি উন্নয় বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, উজান থেকে পানির স্রোতের কারণে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, বড়াল নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি বাড়লে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। এদিকে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও জেলার সদর ও ঈশ্বরদী উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও সবজি খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। বেশ কিছু এলাকায় বাড়িঘরেও পানি ঢুকেছে। গতকাল সদর উপজেলার ঘোষপুর, চর শিবরামপুর, ভবানীপুর এবং ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা ঘুরে দেখা যায় এসব এলাকার কলা, পটোল, মুলা, মরিচ, করলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। চর ঘোষপুর গ্রামের গৃহিণী জ্যোৎস্না বেগম বলেন, ‘আমি চার বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছি, পুরো সবজির খেত পানির নিচে চলে গেছে। গত ১০ দিন আগে খেতে পানি ঢুকেছে, শুক্রবার বাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে। ঈশ্বরদী উপজেলায় সাড়া ইউনিয়নের আড়মবাড়িয়া পশ্চিমপাড়ায় বেশ কিছু বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। এ ছাড়া উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের চরকামালপুর, বিলকাদা, চরকুড়লিয়া এলাকায় ফসলি জমিতে পানি প্লাবিত হওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এমদাদুল হক রানা সরদার জানান, নদীতে জেগে ওঠা বিলবামনী মৌজার চরে প্রায় ১২৫ পরিবার বসবাস করত। এই চর ডুবে যাওয়ায় পরিবারগুলো পানিবন্দী হয়ে পড়ে। বিশুদ্ধ পানির অভাব ও চুলা জালিয়ে রান্না করতে না পারায় এবং গোচারণ ভূমি পানিতে তলিয়ে গেলে পানিবন্দী পরিবারগুলো নিরুপায় হয়ে গবাদি পশু নিয়ে নৌকায় করে নদীর এপারে চলে এসেছে। এ ছাড়া সাড়াঘাটে কয়েকটি দোকান ও প্রায় ১০ বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসার আবদুল লতিফ জানান, গত তিন দিনে পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা, সাড়া, পাকশী ও সাহাপুর ইউনিয়নের কিছু এলাকায় ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করায় ২৫৫ হেক্টর জমির মুলা, মিষ্টি কুমড়া, করলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি, ৩৫ হেক্টর মাসকলাই, ৩৪ হেক্টর আখ ও ২০০ হেক্টর জমির কলার ক্ষতি হয়েছে। পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন বলেন, গত এক সপ্তাহে চর এলাকায় ৮০০ হেক্টরেরও বেশি ফসলের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চর এলাকার মানুষ বেশির ভাগই শাকসবজি এবং কলা চাষ করে। বন্যার পানির কারণে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৩১ হেক্টর সবজি খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 তিনি আরও বলেন, পানি দীর্ঘ সময় ধরে বিশাল এলাকায় থাকে, ফলে পানি কমে যাওয়ার পর বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমি শেষ পর্যন্ত অনুমান করা যাবে।

 বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহজাহান আলী বলেন, গত কয়েক দিন ধরে বেড়া উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। কিছু কিছু আমন ধানের জমিতে পানি ঢুকেছে। আমরা পানি বৃদ্ধির গতিবিধির ওপর লক্ষ্য রাখছি। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে- উজান থেকে আসা ঢলের কারণে আগামী কয়েক দিনে পাবনায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর