মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

কোটি টাকার গুচ্ছগ্রামে থাকছে না কেউ

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

কোটি টাকার গুচ্ছগ্রামে থাকছে না কেউ

মাদারীপুরের শিবচরের পদ্মার চরে হস্তান্তরের দুই বছর পরও কোটি টাকায় নির্মিত গুচ্ছগ্রামে থাকেন না কেউ। নাগরিক সুবিধা না থাকায় তিন বছর আগে গুচ্ছগ্রাম ছেড়ে চলে গেছে হতদরিদ্ররা। দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণেই সরকারের এ পুরো প্রকল্পটি নাজুক অবস্থায় পড়েছে বলে মনে করে নাগরিক সমাজ। পদ্মার চরে অপরিকল্পিতভাবেই গুচ্ছগ্রামটি গড়ে তোলা হয়েছে বলে মনে করেন জেলা প্রশাসক। গুচ্ছগ্রাম থেকে হতদরিদ্রদের চলে যাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখে নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভূমি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের চরচান্দ্রা মৌজায় নির্মাণ করা হয় হতদরিদ্রদের জন্য একটি গুচ্ছগ্রাম। ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ ৯০টি পরিবারের কাছে ঘরগুলো সরকারের পক্ষ থেকে হস্তান্তরও করা হয়। জেলার মূল ভূখ  থেকে দূরে পদ্মার চরে হওয়ায় গুচ্ছগ্রামটিতে যাতায়াত, বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির অভাব রয়েছে। বর্তমানে গুচ্ছগ্রামের চারপাশ ছেয়ে গেছে নোংরা আবর্জনা, ঘাস আর লতাপাতায়। অনেক ঘর ভেঙেচুরে গেছে। কিছু ঘর তলিয়ে গেছে পদ্মার ভাঙনে। বর্তমানে এ গুচ্ছগ্রামে নদীভাঙনের শিকার অন্য তিনটি পরিবার এবং বরাদ্দ পাওয়া একটি পরিবার সেখানে মাথাগোঁজার জন্য আশ্রয় নিলেও বাকি ৮৯টি সুবিধাভোগী পরিবারের এখানে থাকেন না কেউ। গুচ্ছগ্রামে বরাদ্দ পাওয়া পরিবারের একটি মাত্র পরিবার এ গুচ্ছগ্রামে থাকেন। সেই পরিবারের সদস্য জয়তুন বিবি বলেন, এখানে যারা ঘর পাইছে, তাদের অন্য জায়গায় থাকার জমিন আছে বলেই তারা এখানে থাকে না। আমাদের কোনো জমিন নাই, তাই এখানে থাকি। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ভিটে-মাটি হারানো আরও তিনটি পরিবার এ গুচ্ছগ্রামের ফাঁকা ঘরে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয় নেওয়া পরিবারের সদস্যরা জানালেন একই ধরনের কথা। রবিউল শেখ নামের এক আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তি বললেন, নদী ভাঙনের কারণে আমাদের এখন থাকার জায়গা নেই। তাই এই ফাঁকা ঘরে এসে থাকতেছি। আমরা কোনো ঘর বরাদ্দ পাই নাই। এমনিতেই এ ঘরে আশ্রয় নিছি। ঘরগুলোর বেহাল দশা। বসবাসের অনুযোগী হয়ে পড়েছে বলে জানালেন আরেক আশ্রয় নেওয়া পরিবারের সদস্য শেফালি বেগম। তিনি বলেন, টিন দিয়ে পানি পড়ে। ঘরের নিচে মাটি নেই। বাথরুমও ভেঙে গেছে। কারেন্ট নেই। আমাদের থাকার আপাতত কোনো জায়গা নেই বলে এখানে আশ্রয় নিছি। একই ধরনের মন্তব্য করলেন আরেক বাসিন্দা আকলিমা বেগম। পদ্মায় পানি বৃদ্ধিতে ইতিমধ্যে পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে অন্তত ২০টি ঘর। বাকি ঘরগুলোর অবস্থাও নাজুক।

গুচ্ছগ্রাম নির্মাণে পরিকল্পনার অভাবের পাশাপাশি প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে কি না তা উল্লেখ করে তদন্তপূর্বক কর্মকর্তাদের বিচার চান সুধীজনরা। টিআইবির মাদারীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য রাজন মাহমুদ বলেন, শিবচরের এ গুচ্ছগ্রামটি জনবিচ্ছিন্ন দুর্গম এলাকায় করায় মনে হচ্ছে সঠিক পরিকল্পনায় করা হয়নি বলেই এ গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পটি পুরো ভেস্তে গেছে। এ গুচ্ছগ্রাম হতদরিদ্র মানুষের জন্য করা হলেও বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় ঘরগুলোও এখন হতদরিদ্র অবস্থার মতো হয়েছে। সরকারের এ মহতী উদ্যোগ কেন সঠিক পরিকল্পনা করে করা হয়নি তার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করি। মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলছেন, পদ্মার চরে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের পরিকল্পনার ত্রুটি থাকতে পারে উল্লেখ করে গুচ্ছগ্রামটিতে সরেজমিন পরির্দশন শেষে নেওয়া হবে ব্যবস্থা। তিনি বলেন, শিবচরের মূল ভূখ  থেকে বিচ্ছিন্ন একটি চরে কেন সরকারের এ প্রকল্পটি করা হয়েছে, খোঁজ-খবর নিয়ে তা আবারও বসবাসের উপযোগী করা যায় কি না দেখতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আহম্মেদ ও বর্তমানে কর্মরত শিবচর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এমদাদুল হক পুরো প্রকল্পটির তদারকির দায়িত্বে ছিলেন। মাটির ভিটির ওপরে তৈরি ঘরের সঙ্গে বারান্দা, রান্নাঘর, বাথরুম নির্র্মাণে প্রত্যেকটি ঘরের ব্যয় ধরা হয় দেড় লাখ টাকা। তবে শিবচর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারছি না।

সর্বশেষ খবর