মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ওভারপাস নির্মাণকাজে অনিয়ম

বোয়ালমারী প্রতিনিধি

মাঝকান্দি-ভাটিয়াপাড়া ৪৪ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের সাতৈর রেলগেটের ওপর দিয়ে ওভারপাস সড়ক নির্মাণকাজ যেন এলাকাবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত চার বছরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। ব্যস্ততম সড়কটি সচল রাখতে পাশেই নির্মাণ করা হয় বাইপাস সড়ক। সেটাও এখন মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খানাখন্দে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মাঝে-মধ্যে খানাখন্দে মালবাহী ট্রাক আটকা পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বোয়ালমারী আলফাডাঙ্গা থেকে ফরিদপুর ও ঢাকা যাওয়ার একমাত্র সংযোগ সড়কটি বন্ধ থাকায় সাধারণ যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা বিপাকে পড়েছেন। মধুখালী-মাঝকান্দি হয়ে কাশিয়ানী ভাটিয়াপাড়া ভায়া ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সংযোগ স্থলও এ রাস্তাটি। ওভারপাসের জন্য বাইপাস সড়কটি নির্মাণ করা হয়। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। বাইপাস সড়কটি গ্রীষ্মকালে ধূলিদূষণের সৃষ্টি করে আর বর্ষায় পানি-কাদার ভয়ানক পরিস্থিতির ফলে দিশাহারা পথচারী-জনসাধারণ। মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা এ প্রকল্প নিয়ে ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন- কবে হবে রেলওয়ে ওভারপাস? কবে মানুষ মুক্তি পাবে এই যন্ত্রণা থেকে? গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি ভারী যানবাহন উল্টে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। সম্প্রতি গত ৩ আগস্ট ঈশ্বরদী থেকে আলু বোঝায় একটি ট্রাক বোয়ালমারীতে যাওয়ার পথে এ বাইপাস সড়কে উল্টে যায়। গত ১০ আগস্ট বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের কালিয়ান্ডের রুহুল আমিন মন্ডলের গো-খাদ্যবাহী নসিমন গাড়ি উল্টে গিয়েছিল।

 গত রবিবার গোপালগঞ্জ থেকে ধান লোড দিয়ে কুষ্টিয়া যাওয়ার পথে ওই বাইপাস সড়কে রানা শেখের বাড়ির কাছে রাত ২টার দিকে মালবাহী ট্রাক ফেঁসে রীতিমতো বাইপাস সড়কটি আটকে যায়। কোনোমতে পাস কেটে গাড়ি চলাচল করলেও রাস্তায় বড় বড় গর্ত হয়ে প্রাইভেট কার ও বিভিন্ন ছোট যান চলাচল প্রায় বন্ধের উপক্রম। এ বাইপাস রাস্তাটুকু সংস্কার না করলে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। সে জন্য তারা অস্থায়ী বাইপাস সড়কটি সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করার জোর দাবি জানিয়েছেন। সোতাশী গ্রামের সাতৈর বাজার হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ নেতা সালমান হাফিজ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ বাইপাস সড়কের জরাজীর্ণ অবস্থা। ভালো পোশাক পরে এ সড়কে এলে খানাখন্দে জমে থাকা ময়লা পানি গাড়ির চাকায় কাপড়ে লেগে কাপড় নোংরা হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা মো জহুরুল ইসলাম জহির বলেন, প্রথম যখন ওভারপাসের কাজ শুরু হয় মনটা ভরে গিয়েছিল। আমরাও এখন শহরের মতো (উড়াল সেতু) দেখতে পাব। কিন্তু এভাবে আমাদের আশা নিরাশা করে দেবে তা আমরা জানতাম না। অনেক বছর ধরে চলমান কাজ একেবারে স্থগিত হয়ে পড়ে আছে। আর প্রতিদিন বাইপাস সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। এর থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই। ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে একনেকে ৪৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য মহাসড়কের বাজেট ঘোষণা হয়। ফরিদপুরের বাজেট অংশ ৩৫.৫৯ কিলোমিটার। আর এ ওভারপাস (উড়াল সেতু) ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে পড়ে। এর মধ্যে ৪৩৫.৫ মিটার (অর্ধ কিলোমিটার) ওভারপাস নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৩৭.৬২ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে ৭ আগস্ট মেসার্স এম এস প্রকৌশলী নির্মাণ বিশারদ নামে একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজ শুরু করে ২০১৯ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত ৩৫ শতাংশ কাজও হয়নি। এ বিষয়ে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথের (সওজ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন কর্মকার জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গত ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট কাজ শুরু করে। এখন পর্যন্ত ৩৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। তবে বারবার তাদের কাজ করার কথা বললেও নানা অজুহাতে ফেলে রেখেছে। এখন পর্যন্ত যে কাজ বাকি আছে তা করতেও কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে। এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইমরান ফারহান সুমেল বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। লিখিতভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তারা কাজ করবে, করছি বলে দীর্ঘদিন কাজ না করে ফেলে রেখেছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে তাদের বাদ দেওয়া হবে। নতুন টেন্ডারের মাধ্যমে আরেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বাকি কাজ করা হবে। তবে এটা দ্রুতই করা হবে। ফরিদপুর সওজে এম এম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ও মেসার্স এম এস প্রকৌশলী নির্মাণ বিশারদের সঙ্গে যোগাযোগের ফোন নম্বর চাইলেও পাওয়া যায়নি। নির্মাণ এলাকায়ও খোঁজ মেলেনি তাদের কোনো কর্মী বা প্রতিনিধির।

সর্বশেষ খবর