বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

কাজে আসছে না কোটি টাকার সেতু

রোকনুজ্জামান পারভেজ, শরীয়তপুর

কাজে আসছে না কোটি টাকার সেতু

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের নমকান্দি গ্রামের রাস্তার একটি খালের ওপর সেতু নির্মাণ করা হলেও দুই দিকে সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটি এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসছে না। ফলে সরকারিভাবে কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মিত সেতু অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। উদ্বোধনের ছয় বছর হলেও এ সেতুতে সুফল পাচ্ছেন না। উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় থেকে বলা হয়েছিল শিগগিরই সংযোগ সড়ক নির্মাণ হবে। কিন্তু প্রায় দুই বছরেও সংযোগ সড়ক না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে ছয় গ্রামের হাজারো মানুষ। বর্তমানে সেতুর সঙ্গে দুই দিকে বাঁশের খুঁটি দিয়ে সাঁকো তৈরি করে এর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে স্থানীয়রা। উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই হাজার ১৬-১৭ অর্থবছরে উপজেলার সখিপুর থানার উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের নমকান্দি রাস্তার খালের ওপর সেতু নির্মাণ করা হয়। প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় এলাকাবাসীর কোনো কাজেই আসছে না এই সেতু। গত দুই বছর আগে ভারীবর্ষণে পদ্মা নদের পানির তোড়ে সেতুর দুই দিকের সংযোগ সড়ক ভেঙে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে ঠিকাদাররা দায়সারাভাবে বালু দিয়ে সেতুতে ওঠার সংযোগ দিলেও অপর প্রান্তে ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে নামতে বা উঠতে হয়। এই অবস্থায় চরম দুর্ভোগের শিকার কয়েক হাজার মানুষ। সেতুর পশ্চিমে বিস্তীর্ণ চরা লের ফসলি জমি। সেই চরে বসবাস করে কয়েকশ পরিবার। এসব পরিবারের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করতে আসতে হয় সেতুর পূর্ব পাশে চেয়ারম্যান বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ে। প্রতিদিন স্কুল শিক্ষার্থী, রোগীসহ হাজার হাজার মানুষ এ পথ দিয়ে যাতায়াত করেন। সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ার পর সাঁকো দিয়ে লোকজন হাঁটাচলা করলে তা দুলতে থাকে। সাঁকোর দুই পাশে রেলিং নেই। দুই চাকার যানবাহন ও হেঁটে কোনোরকমে সাঁকো দিয়ে মূল সেতুতে উঠতে হয়। অটোরিকশা, ভ্যান চলাচল করতে পারে না। কৃষক আবদুল মান্নান, তমিজ উদ্দিন ও আবদুস সালাম বলেন, আমাদের এলাকার ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষি কাজ করেন। মৌসুমি ফসল উপজেলা সদরসহ জেলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেতুটি ব্যবহার করতে না পারায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা বেশি ঘুরতে হয়। ফলে সময় ও অর্থ দুটোই অপচয় হচ্ছে। এতে করে ফসল উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। সেই তুলনায় মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে অনেক কৃষকই মৌসুমি ফসল উৎপাদন করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।  স্কুল শিক্ষার্থী পারভীন বেগম, ছাদিয়া আক্তার বলেন, প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে স্কুলে যেতে হয়। কিন্তু ব্রিজটিতে উঠতে বাঁশের সাঁকো থাকায় ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয় তাদের। উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুছ সরকার বলেন, গত দুইবার সেতুটির একপাশে সংযোগ সড়কে ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে টাকা খরচ করে বাঁশের সাঁকো দিয়েছি। অতিবৃষ্টির কারণে মাটি সরে গিয়ে সেতুর দুই মাথার এই অবস্থা হয়েছে।

তা ছাড়া সেতুর সংযোগ সড়কের বেহাল অবস্থা। ব্রিজটির ব্যাপারে মন্ত্রী থেকে শুরু করে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সবাই অবগত আছেন বলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। এলজিইডি ভেদরগঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইব্রাহিম হোসেন বলেন, বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হবে।

সর্বশেষ খবর