বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

তিস্তায় ভাঙন বাড়ছে

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

তিস্তায় ভাঙন বাড়ছে

তিস্তায় ভাঙন দিন দিন বাড়ছে। কোনো কিছুতেই যেন থামছে না লালমনিরহাটের এ নদীর ভাঙন। নদীবেষ্টিত জেলার চারদিকে শুধু ভাঙনের শব্দ। সর্বগ্রাসী তিস্তার ভাঙনের কবলে পড়ে সর্বহারা হয়ে কয়েক গ্রামের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভাঙন ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। এমন অভিযোগ ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর। বছরের পর বছর ধরে থেমে থেমে বন্যা ও প্রতিদিনের নদী ভাঙনের সুর লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার ১৭টি গ্রামের মানুষের যেন নিত্য সঙ্গী। জেলার পাঁচ উপজেলায় তিস্তা নদীর প্রবাহ কমতে শুরু করায় এ নদীর অববাহিকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলার হাতীবান্ধা ও আদিতমারী উপজেলায় প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে শত শত ঘরবাড়ি, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদরাসা ও ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। বসতবাড়ি হারা মানুষজন বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে নিদারুণ কষ্টে দিবারাত্রি কাটাচ্ছে। তিস্তা নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের শত শত হেক্টর জমির রোপা আমন খেত জলমগ্ন হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে, বসতভিটা ও আবাদি জমি হারিয়ে ভাঙন কবলিতরা ঘর-বাড়ি নিয়ে ছুটছেন নতুন আশ্রয়ের খোঁজে। অনেকের আশ্রয় মিলছে আত্মীয়স্বজনের জমিতে, কেউ আশ্রয় নিচ্ছেন বাঁধের রাস্তায় আবার কেউ পরিবার নিয়ে পারি জমিয়েছেন অন্য স্থানে। সরেজমিনে বন্যা এলাকায় দেখা যায়, তিস্তার চরাঞ্চলের চারদিকে থই থই করছে পানি। নদীতে একের পর এক ভাঙছে বাড়ি। চরম দুর্ভোগে পড়েছে পরিবারগুলো। এদিকে প্রবল স্রোতে ঘরবাড়ি ভেসে গেছে অনেকের। আবার কেউ নৌকায় করে তাদের ঘরবাড়ি-আসবাবপত্র সরিয়ে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছেন। হুমকি মুখে পড়েছে চর সিন্দুর্ণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্লিনিক, মসজিদ ও মাদরাসা। হাতীবান্ধা উপজেলার চিলমারীপাড়ার ভাঙনকবলিত নুর ইসলাম বলেন, বাড়ি-ঘর ভাসি যাওয়ার মতো হইছে। কোথায় বাড়ি করমো তার জায়গা নাই। বাড়িটা খুব জুলুমের ওপর আছে তা কখন যে ভাঙি যায়। এখন বাপ ব্যাটা কই যে যামো। একই গ্রামের ওমর আলী বলেন, তিস্তা হামাক শ্যাষ করি দ্যাইল। হামার সাজানো সংসার ভাঙি তছনছ করি দিল। ভাঙন কবলিত সাদেকুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ১৫ দিন আগেও আমার বসতভিটা ও ফসলি জমি ছিল আজ সব নদীতে বিলীন। চারদিকে পানি আর পানি। এখন পরিবার নিয়া মানুষের বাড়িতে আশ্রায় নিয়ে আছি। এখন ঘর করে কই থাকব তারও জায়গা নেই। বৃদ্ধা মা ও ছেলে মেয়েকে নিয়ে কই যাব কী খাব তা একমাত্র আল্লাহ জানে। ১০ কেজি চাউল পেয়েছি এটা দিয়ে কয়দিন খাব? এর পর কী খাব? বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। চিলমারীপাড়া গ্রামটি আর কোনো অস্তিত্ব নেই। আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা মোবারক হোসেন বলেন, কয়দিন আগোত হামার বাড়ি আছিল, ঘর আছিল, সংসার আছিল আর আছিল আবাদি জমি ও ফলের বাগান। অ্যালা আর হামার কিছুই নাই। অ্যালা যে পরিবার নিয়া কোনটে যাইম কাহো জানে না। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, তিস্তার পানি কমে যাওয়ায় লালমনিরহাটের সদর, আদিতমারী, হাতীবান্ধা ও কালীগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব গ্রামে তিস্তা নদীর ভাঙনে একের পর এক বসতভিটা, আবাদি জমি, ফলের বাগানসহ নানা স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে হুমকির মুখে পড়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি ক্লিনিক, মসজিদ ও মাদরাসা। হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্ণা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, এক সপ্তাহে ‘আমার ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের চিলমারী পাড়ার প্রায় ৩ শত পরিবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পরিবারগুলোর অনেকে ভিটেমাটি হারিয়ে অন্য এলাকায় আশ্রায় নিয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় জেলা প্রশাসক পরিদর্শন করেছেন। তিনি আরও বলেন, এই তিস্তা পাড়ের মানুষের মৌলিক দাবি একটাই তিস্তার বাম তীরে বাঁধ চাই।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, গত এক সপ্তাহে তিস্তার ভাঙনে ২১৭টি বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে। ভাঙন কোথাও কোথাও তীব্র আকার ধারণ করছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বালুভর্তি জিও ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ চলছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর