সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ার শেরপুরে ফসলি জমিতে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী মহল। তারা মাটি কেটে বিক্রির পর এবার সেখানে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খননযন্ত্রের মাধ্যমে ফসলি জমি থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। এতে আবাদি জমির তলদেশ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ফলে আশপাশের ফসলি জমি, একাধিক সড়ক-সেতু ও অসংখ্য বসতবাড়ি ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। ফলে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবিও জানিয়েছেন তারা। অন্যথায় ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাবে। এমনকি পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলেও মন্তব্য করেন ভুক্তভোগীরা। জানা যায়, উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রাম। গ্রামটির পাশেই ফসলি মাঠ। আর এই মাঠের অন্তত ৯ বিঘা জমির মাটি কেটে বিক্রি করেছেন একই ইউনিয়নের শুভগাছা গ্রামের মাটি-বালু ব্যবসায়ী বলে পরিচিত লাভলু মিয়া। অবশ্য এ জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানাও গুনতে হয়েছে তাকে। সরকারি অনুমতি ছাড়া জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে মাটি-বালু বাণিজ্যের কারণে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা শারমিনের নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় ফসলি জমির মাটি না কাটতে তার কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। এরপরও থামানো যাচ্ছে না ওই মাটি-বালু ব্যবসায়ীদের।

এমনকি গত তিন-চার দিন ধরে ওইসব ফসলি জমির মাটি বিক্রির পর এখন বালু উত্তোলন শুরু করেছেন। অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে অনেকটা নির্বিঘ্নেই বালু উত্তোলন করে চলেছেন তারা। গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করার কারণে ফসলি জমিগুলো বিল ও পুকুরে পরিণত হয়েছে। এখন সেখানে দুটি ড্রেজার বসানো হয়েছে। আর সেই খননযন্ত্রের মাধ্যমেই দিন-রাত সমানতালে বালু তোলা হচ্ছে। এ সময় কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা হায়দার আলী, সোলায়মান আলীসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে। তারা বলেন, ফসলি জমির প্রথমে মাটি কাটা হলো। এখন ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। ফলে জমির তলদেশ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় আমাদের আশপাশের জমিগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া মাটি-বালু পরিবহনের কাজে ভারী যান (ড্রাম ট্রাক) চলাচলের কারণে গ্রামীণ সড়কটির অবস্থা খুবই করুণ। এমনকি সড়কের মাঝে থাকা দুটি  সেতু ভেঙে গেছে। গ্রামের অসংখ্য বসতবাড়ি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলেও জানান। ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, সব মহলকে ম্যানেজ করেই ফসলি জমি থেকে মাটি-বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে জোর প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে প্রভাবশালী মহলটি। তাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। ফলে প্রভাবশালী ওই ব্যক্তিরা দাপটের সঙ্গেই অবৈধ মাটি-বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, এভাবে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হলেও কারও পক্ষে প্রতিবাদ করার সাহস হচ্ছে না। কারণ প্রতিবাদ করলেই ওই ব্যক্তিকে হুমকি-ধমকিসহ নানা রকম হয়রানি করা হয়। জানতে চাইলে অভিযুক্তরা এড়িয়ে যান। এমনকি বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত নেই বলেও দাবি করেন। তবে যেসব ফসলি জমি থেকে বালু তোলা হচ্ছে সেসব জমি তাদের নিজের বলে দাবি করেন।  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি জানা নেই। তাই খোঁজখবর নিয়ে এ ধরনের কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে অবৈধ মাটি-বালুর পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথাও বলেন এই নির্বাহী কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর