মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

কালীগঞ্জে ফিরলেন মৃত ব্যক্তি বিক্রি করলেন জমিও!

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে মৃত মকলেছার রহমানকে জীবিত দেখিয়ে ভুয়া ব্যক্তি মোখলেছার রহমানকে দাতা সাজিয়ে একটি চক্র কৌশলে জমি রেজিস্ট্রি করে নেন ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেডের পক্ষে পরিচালক সাখওয়াত হোসেনের নামে। মৃত মকলেছার রহমান উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের ইয়ার আলীর ছেলে এবং জমির ভুয়া দাতা মোখলেছার রহমান একই উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের কাশিরাম এলাকার ইয়ার উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় তুষভান্ডার রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক ও স্থানীয়দের মাঝে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, মকলেছার রহমান মারা যান ২০০৫ সালে। তিনি উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের চার বারের ইউপি সদস্য ছিলেন। মারা যাওয়ার ১৬ বছর পর চলতি বছরের ২৯ আগস্ট তাকে ‘জীবিত’ দেখিয়ে মোখলেছার রহমান নামের এক ব্যক্তিকে মকলেছার রহমান সাজান এবং দলিল লেখক আলমগীর হোসেনের মাধ্যমে হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্ব বিছনদই এলাকার রবিউল আলম বাবুর বাড়িতে সাব-রেজিস্ট্রার রতন অধিকারীকে দিয়ে কমিশন দলিল হিসেবে ৩ একর ৬৪ শতাংশ জমির দলিল রেজিস্ট্রি করেন।

যার দলিল নম্বর-৪৩৩৮/২১। দলিলে জমির মূল্য দেখানো হয়েছে ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জমিটি ভোটমারী মৌজার বিআরএস ১৩৪৪ নম্বর খতিয়ানের ১০২৯৯ নম্বর দাগের। দলিলটিতে সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন রবিউল আলম বাবু এবং শনাক্তকারী হিসেবে রয়েছেন বুলু। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তুষভান্ডার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে জমিটি রেজিস্ট্রি করা হয়নি। অভিযোগ, দলিলের সাক্ষী বাবু ও শনাক্তকারী বুলুসহ কয়েকজন ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ারের জমি দখল থেকে শুরু করে নানা কর্মকান্ডে জড়িত।

দলিল লেখক আলমগীর হোসেন চন্দ্রপুর এলাকার আইয়ুব মোক্তারের ছেলে। এ বিষয় তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি বক্তব্য না দিয়ে সরাসরি দেখা করার অনুরোধ জানিয়ে ফোন কেটে দেন। পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ভোটমারী ইউপি চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত একটি ভুয়া প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ করেন মকলেছার ও জাতীয় পরিচয়পত্রের মোখলেছার একই ব্যক্তি।

এ বিষয় জানতে চাইলে মূল মালিক মৃত মকলেছার রহমানের দুই ছেলে সবুজ ও বিপ্লব জানান, আমরা দুই ভাই ঢাকায় থাকার সুযোগে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময় এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে একটি চক্র। যারা এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তারা।

ভুয়া ওই প্রত্যয়নের বিষয় জানতে চাইলে ভোটমারী ইউপি চেয়ারম্যান আহাদুল হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রত্যয়নটি আমার দেওয়া নয়, এটি ভুয়া। চক্রটি আমার স্বাক্ষর স্ক্যান করে সেটি তৈরি করেছে। মৃত মকলেছার রহমান আমার পরিচিত ব্যক্তি। তিনি চারবারের ইউপি সদস্য ছিলেন।

ভুয়া জমিদাতা মোখলেছার রহমান বলেন, জমির মালিক সাজাতে একটি চক্র অর্থের লোভ দেখিয়ে পূর্ব বিছনদই এলাকার বাবুর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দলিলে আমার স্বাক্ষর নেন। দলিলের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর আমাকে যে টাকা দিয়েছে সে টাকাও ফেরত নেন ওই চক্রটি।

এ বিষয় তুষভান্ডারের সাব-রেজিস্ট্রার রতন অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

সর্বশেষ খবর