বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

তাজা গাছ মরা দেখিয়ে বিক্রি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

তাজা গাছ মরা দেখিয়ে বিক্রি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বেনীপুর-রহনপুরা সড়কের দুধারে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার গাছ। বরেন্দ্র অঞ্চলের তীব্র রোদে পুড়ে কৃষি কাজ করা শ্রমিকরা একটু গা জিরিয়ে নিতেন গাছের শীতল ছায়ায়। শিক্ষার্থীরা ছায়াঘেরা এই সড়ক দিয়েই যাতায়াত করত মনের আনন্দে। প্রায় ৩০ বছর আগে শিশু, কড়াই, মিনজুরি গাছ লাগানো হয় এই সড়কে। সব কিছুকেই উপেক্ষা এসব তাজা গাছকে মৃত দেখিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। এরপরই ঠিকাদার কেটে সাবার করছেন গাছগুলো। আর গাছগুলো কেটে নেওয়ায় এখন খাঁ খাঁ করছে সড়কটি। ছায়াঢাকা সেই সড়কটি এখন মরুভূমির মতো রূপ নিচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বেনীপুর-রহনপুরা গ্রামের সড়কের চিত্র এটি। জানা গেছে, ওই স্থানের গাছগুলো কাটতে মূল্য নির্ধারণের জন্য ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে চিঠি দেয় বিএমডিএ। পরে ওই চিঠির প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি গাছের মূল্য নির্ধারণ করে। আইন মেনে গাছ পরিবহনের নির্দেশনা দেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আহম্মদ নিয়ামুর রহমান। বন বিভাগের ওই চিঠিতে ৮৬০টি গাছের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে কয়েকটি মরা গাছসহ তাজা গাছগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে কিনেছে নওগাঁর মান্দা উপজেলার একটি স’ মিল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আরেকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এদিকে গাছ কাটার সব আয়োজন সম্পন্ন করে ঠিকাদারদের গাছ বুঝিয়ে দেন বিএমডিএ’র নাচোল জোনের সহকারী প্রকৌশলী। এরপর তারা কয়েকদিন ধরে গাছ কাটছে। কয়েকটি লটে ৮৬০টি গাছ মাত্র ২২ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। গড়ে প্রতিটি গাছে দাম ধরা হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৬০০ টাকা। তবে এলাকার জনগণ অভিযোগ করে বলছেন, বেনীপুর-রহনপুরা সড়কের একেকটি গাছের দাম অন্তত ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা করে হবে। অথচ বিএমডিএ’র সহকারী প্রকৌশলীর যোগসাজশে মোটা মোটা গাছ পানির দরে বিক্রি করা হয়েছে। এদিকে উপজেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কাটা গাছের মোট দামের ন্যায্য হিস্যা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদকে দিতে হবে। অথচ এই নিয়মও মানেনি বিএমডিএ’র নাচোল জোনের সহকারী প্রকৌশলী শাহ মো. মঞ্জুরুল ইসলাম। ইউনিয়ন পরিষদের টাকার প্রাপ্য অংশ দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে নাচোল সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম বিস্ময় প্রকাশ করেন।

 বলেন, ন্যায্য হিস্যা দেওয়া তো দূরের কথা, আমাকে জানানোই হয়নি গাছ কাটার কথা। আমার এলাকায় গাছ কেটে সাবার করে দিল অথচ আমিই জানতে পারলাম না। তবে বিএমডিএ’র নাচোল জোনের সহকারী প্রকৌশলী শাহ মো. মঞ্জুরুল ইসলাম দাবি করে বলেন, গাছ মরে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। ঝড় হলে গাছ পড়ে প্রাণহানি ঘটতে পারে, এজন্য টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ বিক্রি করা হয়েছে। এতে কোনো অনিয়ম হয়নি। আর ইউনিয়ন পরিষদকে তাদের ন্যায্য হিস্যা পরিশোধ করা হয়েছে। অন্যদিকে বিএমডিএ’র গাছ কাটার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা সুলতানা বলেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাটার সুযোগ নেই। বিএমডিএ মৃত গাছ কাটার কথাই বলেছিল। তবে তাজা তাজা গাছ কি কারণে কাটা হয়েছে এবং কাটা গাছের মূল্যের ১০ শতাংশ হারে ইউনিয়ন পরিষদকে কেন দেওয়া হয়নি তা খতিয়ে দেখা হবে। অপরদিকে বিএমডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রশিদ এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই বলে জানান।

 

সর্বশেষ খবর