বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

তিস্তার পেটে দুই স্কুল টিনের চালায় পাঠদান

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

তিস্তার পেটে দুই স্কুল টিনের চালায় পাঠদান

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম  শ্রেণির ছাত্র সাইফুল ইসলাম। গত বছর যখন সে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল তখন করোনা সংক্রমণের কারণে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যালয়। এরপর দীর্ঘ ১৮ মাস তার আর বিদ্যালয়ে যাওয়া হয়নি। এখন খুলেছে বিদ্যালয়। আর সাইফুল চতুর্থ শ্রেণি থেকে উঠেছে পঞ্চম শ্রেণিতে। কিন্তু তার সেই রঙিন টিনের  সৌন্দর্যময় বিদ্যালয়টি আর নেই। এক মাস আগে তিস্তা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে তার বিদ্যালয়টি। এমন অবস্থা শুধু পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নয়। গত ২৭ আগস্ট একই ইউনিয়নের পূর্ব হলদিবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়েও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একইসঙ্গে বিলীন হয়েছে একই এলাকার কমিউনিটি স্বাস্থ্য  কেন্দ্রটিও। এদিকে নদীগর্ভে বিলীন হওয়া বিদ্যালয় দুটি পুনঃস্থাপনের স্থান নির্ধারণে নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব হলদিবাড়ী প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের পাটিকাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ পুরনো ভবনের তিনটি কক্ষে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। আর পশ্চিম হলদিবাড়ী প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ওই এলাকার সাত ভাইয়ের বালু চরে একটি টিনের চালা করে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। প্রখর রোদের কারণে ওই টিনের চালার মধ্যে ক্লাস করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। স্থানীয় প্রশাসন বিদ্যালয় দুটি পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলে স্থান নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সালমা আক্তার বলেন, টিনের চালা ও গরম বালুর পর ক্লাস করতে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। উপরে টিনের তাপ ও নিচে বালুর তাপ। জরুরিভাবে যদি আমাদের ভালো ক্লাস রুম করা না হয় তাহলে হয়তো আর আমাদের স্কুলে আসা হবে না। ওই এলাকার হাফিজুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম বলেন, পশ্চিম হলদিবাড়ী প্রাথমিক স্কুলটি নদীরগর্ভে যাওয়ায় এই চরটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আগে সে চরে বিদ্যালয়টি ছিল ওই চরে এখন মাত্র ২০/২৫টি পরিবার বসবাস করে। বর্তমানে যে স্থানে টিনের চালা করে বিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে। সেই চরে দেড় শতাধিক পরিবার থাকতো। সে কারণে ভালো মানের ক্লাস রুম তৈরি করলে অনেক শিশু লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। এই চরটি সহজে নদী ভাঙনের শিকার হবে না। পশ্চিম হলদিবাড়ী প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক শহিনুর ইসলাম বলেন, বর্তমানে যে চরে টিনের চালা করা হয়েছে ওই চরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। সে কারণে ওই চরে বিদ্যালয়টি পুনঃস্থাপনসহ জরুরিভাবে ক্লাসরুম তৈরি করা প্রয়োজন। পাটিকাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল আলম সাহাদাত বলেন, এবার নদী ভাঙনে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা টিনের চালায় কষ্টে ক্লাস করছে।

তাদের জন্য উপযোগী ক্লাসরুম তৈরি করা প্রয়োজন। হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সামিউল আমিন বলেন, বিদ্যালয় দুটি পরিদর্শন করেছি। খুব তাড়াতাড়ি বিদ্যালয় দুটির স্থান নির্ধারণ করে অবকাঠামো তৈরির ব্যবস্থা করা হবে।

সর্বশেষ খবর