সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মেঘনার ভাঙনে গৃহহীন ৫০ হাজার পরিবার

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

মেঘনার ভাঙনে গৃহহীন ৫০ হাজার পরিবার

মেঘনার ভাঙনের প্রভাব পড়েছে লক্ষ্মীপুর উপকূলীয় অঞ্চলে। নদীর অব্যাহত ভাঙনে এখানকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এখন গৃহহীন হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ আর বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে ভাঙাচোরা ঝুপড়ি ঘরে এখন বাস করছেন তারা। কারও ঘরে কাটাচাটা টিন, কারও প্লাস্টিকের পলিথিনের ছাউনিতে জরাজীর্ণ লক্কড়ঝক্কড় ঘরে দুর্ভোগে জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পাওয়ার আকুতি এসব অসহায় মানুষের। সরকারি-বেসরকারি সীমিত বরাদ্দে নদীভাঙা এসব পরিবারের সান্ত্বনা যেন মিলছেই না। জেলা প্রশাসক বলছেন, নদীভাঙাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঘর দেওয়া হচ্ছে। কোনো গৃহহীন থাকবে না বলে আশ্বাস দেন তিনি। জানা যায়, কিছুদিন আগেও লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগরের মতিরহাট ও চরলরেন্স এলাকার নদীতীরে বাস করত শতাধিক পরিবার। ছিল ঘরবাড়ি, পুকুর ও ফসলি জমিসহ সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা। কিন্তু নদীগর্ভে বিলীন হয়ে এখন এসব শুধুই স্মৃতি হয়ে আছে বাসিন্দাদের মনে। এ জেলায় মেঘনার অব্যাহত ভাঙন তান্ডব প্রায় ৩০ বছর ধরে চলে আসছে বলে জানান স্থানীয়রা। বর্ষায় ভাঙনের তীব্রতা বাড়ে। এ দুই এলাকাই নয়, এ ভাঙনের প্রভাব পড়েছে লক্ষ্মীপুরের সদর, রায়পুর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলার মেঘনা তীরবর্তী এলাকায়। বিশেষ করে ভাঙনের তীব্রতা ছিল রামগতি ও কমলনগরে ব্যাপক। এসব এলাকায় প্রতিনিয়ত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনার পাশাপাশি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বহু মানুষের ভিটাবাড়ি ও ফসলি জমি। সর্বস্ব হারিয়ে এখানকার মানুষ বাধ্য হয়ে বিভিন্ন এলাকায় স্থানান্তরিত হচ্ছে। বিত্তবানরা বিভিন্ন জেলায় চলে গেলেও বেশির ভাগ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। তারা বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন সড়কের পাশে আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় তথ্যমতে, বর্তমানে নদীভাঙা এমন পরিবারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ হাজারে। বিশেষ করে সদরের মজু চৌধুরীর হাট থেকে মতিরহাট পর্যন্ত সরকারি বেড়িবাঁধের দুই পাশে, রামগতি সড়কের মিয়ার বেড়ি থেকে তোরাবগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে, তোরাবগঞ্জ থেকে মতিরহাট সড়কের বিস্তীর্ণ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে তারা। এসব মানুষ কেউ কেউ কাটাচাটা টিন, প্লাস্টিকের পলিথিন আর হোগলা পাতার ছাউনিতে জরাজীর্ণ লক্কড়ঝক্কড় ঘর তৈরি করে বাস করছেন। খোলা আকাশের নিচেও বাস করছেন কেউ কেউ। তবে নদীকূল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার মানুষ জীবন-জীবিকা নির্বাহে সবাই কর্মব্যস্ত। এদের কেউ বুনছেন জাল, কেউবা পালন করছেন পশু-পাখি, কেউবা ধরছেন মাছ, আবার কৃষিসহ হাতের কাজে উপার্জন করছেন অনেকে। সবাই জীবন সংগ্রামে লড়লেও এদের বাসস্থানে এসে হতাশা ও দুর্ভোগে মানবেতর জীবন-যাপনের চিত্র ভেসে ওঠে। নদীভাঙা এমন এক পরিবারের সন্ধান মিলে সদরের মজু চৌধুরীর হাট বেড়িবাঁধ এলাকায়। তারা ৩০ বছর ধরে বাস করছেন এ এলাকায়। নুরু মিস্ত্রি ও তার স্ত্রী সাজু বেগম দুজনই এখন বয়োবৃদ্ধ। তবুও থেমে নেই এ দম্পতির পথচলা। রবিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায় স্ত্রী সাজু জাল বুনছেন আর তার স্বামী সুতা ঠিক করে দিচ্ছেন তাকে। কথা বলে জানা যায়, প্রতি সপ্তাহে ১০০০-১২০০ টাকা আয় করে সংসার চলে তাদের। কিন্তু তাদের বসতঘরের একেবারেই বেহাল অবস্থা। এক চালা টিনের ঘর ওপরে কাটাচাটা টিন, ভাঙাচোরা লক্কড়ঝক্কড় অবস্থা ঘরের। তবুও ঝুঁকি নিয়ে থাকছেন ওই ঘরে। রোদে জ¦লে বৃষ্টিতে ভিজে দিন যাপন করছে এ দম্পতি।

সর্বশেষ খবর