শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

হরিজন পল্লীর বাসিন্দাদের দুঃখগাথা

♦ এক কক্ষে ৬-৮ জনের বাস ♦ একমাত্র নলকূপটি অকেজো ♦ টয়লেটে যেতে ধরতে হয় লাইন

নজরুল মৃধা, রংপুর

হরিজন পল্লীর বাসিন্দাদের দুঃখগাথা

রংপুরের হরিজন পল্লীর একমাত্র নলকূপটি অকেজো (বাঁয়ে), পাশাপাশি নারী-পুরুষের টয়লেট -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রংপুর নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ জুম্মাপাড়ায় হরিজন পল্লীতে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ দুঃখকে সঙ্গী করে বাস করছেন যুগের পর যুগ। এ পল্লীর প্রতিটি পরিবারের ছয় থেকে আটজন সদস্য ১০ বাই ১২ ফুট একটি ঘরে গাদাগাদি করে বাস করছেন। এখানে প্রায় ১৫০টি ঘরে থাকছেন প্রায় ৭০০ লোক। এ ৭০০ মানুষের ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ একটি মাত্র নলকূপ। তাও প্রায় এক বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এতোগুলো পরিবারের জন্য ব্যবহার উপযোগী টয়লেট আছে মাত্র দুটি। প্রাকৃতিক কাজ সারতে ধরতে হয় দীর্ঘ লাইন। সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায় পড়েন মহিলারা। যে ঘরে তারা বাস করছেন তাও জরাজীর্ণ। তাছাড়া ঝড়বৃষ্টি এলে পল্লীতে জমে হাঁটুপানি। বছরের পর বছর তারা নিদারুণ কষ্টে দিন কাটালেও সংশ্লিষ্ট কারও মাথাব্যথা নেই।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেশ স্বাধীনের পর তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যান মাহতাব খান এ পল্লী স্থাপনের উদ্যোগ নেন। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ আফজাল হরিজন পল্লীতে গড়ে তোলেন আধপাকা ঘর। প্রায় চার দশক আগে তৈরি এসব ঘরের অনেক স্থানে ফাটল ধরেছে। বাড়ি ধসে যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। ওই পল্লীতে বসবাসরত শ্রী মন্ডলের ছেলে কমল বলেন, বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই ছেলেসহ তারা সবাই এক ঘরে থাকেন। কেউ বারান্দায় কেউ মেঝেতে রাত পার করেন। পল্লীর সর্দার জীবনের মা দুলালী জানান, একটি ঘরে আটজন গাদাগাদি করে থাকেন। তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা বাথরুম এবং পানির। পল্লীর আশপাশ থেকে পানি এনে জীবন ধারণ করতে হচ্ছে। জীবনের বাবা ভোলা বলেন, হরিজনদের ৮০ বিঘা জায়গার মধ্যে মাত্র পৌনে দুই বিঘায় তারা বাস করছেন। বাকি জমি দখল হয়ে গেছে। জানা যায়, ওই পল্লীতে স্কুলে যাওয়ার উপযুক্ত শতাধিক ছেলেমেয়ের মধ্যে মাত্র সাতজন স্কুলে যাচ্ছে। এসএসসি পাস করেছেন মাত্র একজন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন ছয়-সাতজন। স্থানীয় ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সেকেন্দার আলী বলেন, হরিজন পল্লীর মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সিটি করপোরেশন কাজ করছে। দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হরিজন পল্লীর ঠিক কতটুকু জমি বেদখল রয়েছে তা সিটি করপোরেশনের সার্ভে রিপোর্ট না দেখে বলা যাবে না। সুশাসনের জন্য নগরিক-সুজন-এর জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন বলেন, ওখানে শত শত পরিবার অবৈধভাবে জায়গা দখল করে বসবাস করছে। কয়েক যুগ আগে হরিজনদের জন্য নির্মিত ঘরগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দখলদারদের উচ্ছেদ করে পরিকল্পিভাবে সেখানে বাসস্থান গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।

সর্বশেষ খবর