রবিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

স্ত্রী-সন্তানের নামে অসচ্ছল ভাতা নিলেন সাধারণ সম্পাদক

রেড ক্রিসেন্ট করোনা সহায়তা

রাশেদ খান, মাগুরা

মাগুরায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি মাগুরা ইউনিট থেকে দেওয়া করোনা সহায়তার টাকা বিতরণে স্বজনপ্রীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জেলা কমিটির প্রায় প্রত্যেকেই নিজ ও পরিবারের প্রত্যেকের নামে ২ হাজার ৫০০ টাকা হারের এই বরাদ্দ পেয়েছেন। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মাগুরা ইউনিটের বর্তমান সেক্রেটারি স্থানীয় শ্রীকোল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ওরফে বাদশা শিকদার নিজেই স্ত্রী, দুই মেয়ের নামে নিয়েছেন এ ভাতা। তার মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে হায়দার আলী মিয়া নামে একজনকে। অথচ তিনি সম্পদশালী ব্যক্তি। আছে পাকা বাড়ি। বর্তমান কমিটির সদস্য সোহেল খন্দকার একইভাবে নিয়েছেন ২ হাজার ৫০০ টাকার বরাদ্দ। তালিকায় রেখেছেন নিজের ছেলে আবু মুসহাবের নাম। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে আরও তথ্য। নুরুজ্জামান রাজু নামে এক ব্যক্তি প্রায় ২ লাখ টাকা মূল্যের মোটর সাইকেলের মালিক, আছে দ্বিতল বাড়ি- তিনি এই সহায়তা পেয়েছেন। কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যানের আত্মীয় নিলু মিয়া নামে একজনের পরিবারের চার সদস্যের নামে দেওয়া হয়েছে এ সহায়তা।

 ধনী ব্যক্তি মুন্সী ইলিয়াস, নাছিমা পারভিন, মনিরুল, বেলায়েত আলী, কানিজ ফাতেমা এ রকম ধনী অনেককেই তালিকায় রেখে দেওয়া হয়েছে এ বরাদ্দ। মোট তালিকার ৫০০ জনের মধ্যে সিংহভাগ ব্যক্তির নাম শ্রীপুরের শ্রীকোল ইউনিয়নে, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এ টি এম আবদুল ওয়াহ্হাব ও জেলা ইউনিটের সেক্রেটারি বাদশা শিকদারের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠজনদের নাম দেওয়া হয়েছে। তালিকায় অসচ্ছল কর্মহীন এই শর্তটি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। ফলে ধন-সম্পদের মালিক এসব ব্যক্তির নামে অসচ্ছলদের এই সহায়তা বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। জানা গেছে, আগের কমিটির মেয়াদ পূর্ণ না হওয়ার আগেই গঠনতন্ত্রের রীতিনীতির বাইরে গিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যানের কাছের মানুষদের। যাদের অন্যতম হচ্ছেন বর্তমান কমিটির সদস্য জামিরুল মুন্সী। জামিরুল মুন্সীসহ তার পরিবারের চারজনের নাম করোনা সহায়তার এই তালিকায় রয়েছে। অথচ তার মেয়ে জাকিয়া নিজেই রেড ক্রিসেন্টের আওতাধীন মাগুরার আছিয়া খাতুন ব্লাড ব্যাংকে কর্মরত। তাদের রয়েছে পাকা ঘরবাড়ি। জেলা ইউনিট কমিটির সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম ওরফে বাদশা শিকদার বলেন, ‘এই তালিকা তৈরি হয়েছে আমি সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগে। আমি সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এ টি এম আবদুল ওয়াহ্হাব সাহেব আমাকে স্বাক্ষর করতে বললে আমি তা স্বাক্ষর করি এবং পরবর্তীতে উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করি। নিজের পরিবারসহ সচ্ছলদের নাম তালিকায় থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘করোনায় মধ্যবিত্তদের অনেকেই আর্থিক বিবেচনায় অসচ্ছল হয়েছেন। সে ধরনের কারও নাম তালিকায় থাকা দোষের কিছু নয়। মাগুরা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের পূর্ববর্তী কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলী আখতার দুখু বলেন, ‘বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট চেয়ারম্যানের নির্দেশে নিয়ম বহির্ভূতভাবে এই তালিকা করা হয়েছে। আমরা এর অনুমোদন না দেওয়ায় কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন করে তাদের মাধ্যমে অনুমোদন ও বিতরণ করা হয়’। মাগুরা রেড ক্রিসেন্টের বর্তমান চেয়ারম্যান পঙ্কজ কুন্ডু বলেন, ‘আবদুল ওয়াহ্হাব সাহেব চেয়ারম্যান হওয়ার পরেই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জেলায় ৫০০ উপকারভোগীর তালিকা করা হয়েছে। তালিকায় কভিড-১৯ এ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের প্রাধান্য দিয়ে তাদের মধ্যে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে বিতরণ করার কথা। কিন্তু উল্লিখিত নেতৃবৃন্দ শ্রীপুর উপজেলার শ্রীকোল ইউনিয়নেই তাদের আত্মীয়-স্বজনদের মাঝেই এ টাকা বিতরণ করেছেন। তালিকায় আমার স্বাক্ষর থাকার কথা। অনিয়ম হওয়ায় আমি স্বাক্ষর করিনি। সে কারণে বর্তমান সহসভাপতি বিমল শিকদার সেখানে স্বাক্ষর করে এই তালিকা চূড়ান্ত করেছেন’।

সর্বশেষ খবর