বুধবার, ৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

শ্রেণিকক্ষের সংকটে ক্লাস চলছে ভাড়া করা ঘরে

মো. শামিম কাদির, জয়পুরহাট

শ্রেণিকক্ষের সংকটে ক্লাস চলছে ভাড়া করা ঘরে

টিনের জীর্ণ ভবনের তিনটি কক্ষে পাঠদান চলছে জয়পুরহাট জেলার পলিকাদোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সরকারি এই স্কুলের প্রাক প্রাথমিকের ক্লাস চলছে ভাড়া নেওয়া কক্ষে। চলমান বর্ষায় ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা আর গ্রীষ্মকালে গরমের তীব্রতার মধ্যেই ক্লাস করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। কক্ষ সংকটে পাঠদানে সমস্যা হলেও শিক্ষকদের আন্তরিকতার কারণে বিদ্যালয়ে পড়ালেখার মান ভালো। প্রতি বছর মেধা ও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিলাভ করার রেকর্ডও রয়েছে এ বিদ্যালয়ের। দীর্ঘদিনের পুরনো টিনসেডের এ স্কুলটির সম্মুখভাগ সাজানো হয়েছে বাগান বিলাস ফুল দিয়ে। পাশাপাশি ইট-সিমেন্টের কারুকার্য দিয়েও ফুটে তোলা হয়েছে স্কুলটির  নান্দনিক রূপ। কিন্তু শ্রেণি কক্ষের সংকট থাকায় পাঠদানে চরম ব্যাঘাত ঘটছে দাবি শিক্ষক ও স্কুল পরিচালনা কমিটির। জয়পুরহাট শহর থেকে দশ কিলোমিটার দূরে নিভৃত পল্লীতে অবস্থান পলিকাদোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯০৬ সালে স্থানীয়দের দান করা ৪৭ শতাংশ জায়গায় স্থাপিত এ বিদ্যালয়টিতে তিন কক্ষের টিনশেড ভবন নির্মাণ করা হয় ১৯৯৬ সালে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অপেক্ষাকৃত নিচু টিনশেডের এই ভবনে শিক্ষালাভ করছে ১১৯ জন শিক্ষার্থী। যাদের নিয়মিত পাঠদানে দায়িত্ব পালন করছেন ৫জন শিক্ষক। কক্ষ সংকটের কারণে দুপুরের মধ্যেই পাঠদান শেষ করতে হয় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের। এরপর বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান। কক্ষ সঙ্কুলান না হওয়ায় স্কুল সংলগ্ন ভাড়া নেওয়া পৃথক একটি কক্ষে পাঠদান করতে হয় প্রাক-প্রাথমিকের (শিশু শ্রেণি) শিক্ষার্থীদের। যেটি স্কুলের টিনশেড ভবন থেকে প্রায় ১০০ ফুট দূরে অবস্থিত। দীর্ঘদিনের পুরনো টিনশেড ভবনে পাঠদানে বেশি সমস্যা হয় বর্ষাকালে। বৃষ্টির সঙ্গে ঝড় শুরু হলে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে পড়ে শিশু শিক্ষার্থীরা। তখন পাঠদান বন্ধ রাখতে হয়। আর গ্রীষ্মে প্রখর রোদে টিনের গরমে ক্লাসে থাকতে চায় না শিশু শিক্ষার্থীরা। স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৌম্য সরকার জানায়, তাদের স্কুলটি দেখতে সুন্দর। শিক্ষকরা ভালো। কিন্তু টিনশেডের পুরনো শ্রেণি কক্ষগুলো খুব নিচ। গরমের সময় প্রচ- গরম লাগে। একই শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহমিদা ও সুমাইয়া জানায়, ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে ঘরে থাকতে ভয় করে। প্রচ- শব্দ হয়। তখন বিদ্যুৎ চলে যায়। ঘর অন্ধকার হয়ে যায়। অন্ধকারে আমাদের ক্লাস করতে কষ্ট হয়। এ ছাড়া চলমান বৈদ্যুতিক ফ্যানের শব্দে ক্লাস করতে খুবই সমস্যা হয়। স্কুলের সহকারি শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন,এ জেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনগুলো পাকা এবং দ্বিতল। কেবল আমাদের স্কুলটিই অনেক পুরানো। অথচ ভবন নির্মাণের জন্য অনেক জায়গা রয়েছে। তারপরও আমরা স্কুলটিকে সাজানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের অফিস কক্ষও ছোট। কোনো রকমে কার্যক্রম চলে। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মওদুদ আলম বলেন, ‘আমার বাবা এই স্কুলের জন্য ৪৭ শতক জায়গা দান করে গেছেন। ভবন নির্মাণের কথা বলে প্রতি বছর কর্তৃপক্ষ এই স্কুলের নাম লিখে নিয়ে যায়। কিন্তু আজ পর্যন্ত ভবন নির্মাণ হয়নি। ফলে খুব কষ্টে এখানে পড়ালেখার কার্যক্রম চলছে। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মো. সালাহ্ উদ্দীন বলেন,‘প্রতি বছর এ স্কুল থেকে মেধা ও সাধারণ গ্রেডে শিক্ষার্থীরা বৃত্তিলাভ করে। স্কুলের বার্ষিক ফলাফলও সন্তোষজনক। বিদ্যালয়টির কক্ষ সঙ্কটের কথা স্বীকার করে জয়পুরহাট সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তারেক মো. রওনাক আখতার বলেন, চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ে স্কুলটিতে একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করার। এজন্য কাগজপত্রও পাঠিয়েছি।

আশা করছি শিগগিরই এটি বাস্তবায়ন হবে।

সর্বশেষ খবর