বুধবার, ৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

মানবিক সহায়তায় গরমিল তদন্ত কমিটি গঠন

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া আফরিনের বিরুদ্ধে প্রায় ১২ লাখ টাকা হিসাবে গরমিলের অভিযোগ উঠেছে। করোনার সময়ে মানবিক সহায়তার ত্রাণসামগ্রী ক্রয়ের সরকারি বরাদ্দ হিসেবে দেওয়া হয় ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ। এই বরাদ্দ দিয়ে সোনাতলা উপজেলায় ২ হাজার ৫৮৪টি শুকনা খাবার প্যাকেট বিতরণ করার কথা। কিন্তু সেখানে ৭০০ প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। আর ১ হাজার ৮৮৪ প্যাকেটের কোনো খবর নেই। বাকি ত্রাণ সামগ্রীর সঠিক হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ইউএনও সাদিয়া আফরিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, বরাদ্দকৃত অর্থ নিয়মমাফিক বিতরণ করা হয়েছে। এসব ঘটনা সামনে নিয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এদিকে, জেলা প্রশাসন থেকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ২ হাজার ৫৮৪টি শুকনো খাবার প্যাকেট সোনাতলা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে বিতরণ করার কথা ছিল। সেখানে প্রতিটি ইউনিয়নে ১০০টি করে ৭০০ প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। অথচ ত্রাণ বিতরণের অফিস ফাইল নোটে ৩৬৪ প্যাকেট করে বিতরণ দেখানো হয়েছে। ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ মাত্র ১০০ প্যাকেট করে শুকনা খাবার পেয়েছেন। জানা গেছে, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কোভিড-১৯ ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র ও দুস্থ পরিবারের সাহায্যার্থে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় চলতি বছরের গত ৮জুন বগুড়া জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত একটি পত্রে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। হিসাব অনুযায়ী সোনাতলা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে ৩৬৪ করে মোট ২ হাজার ৫৮৪টি শুকনা খাবারের প্যাকেট বিতরণের কথা ছিল।

থাকলেও সেখানে প্রতিটি ইউনিয়নে ১০০টি করে শুকনা খাবারের প্যাকেট স্ব-স্ব ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া হয়। প্রতিটি প্যাকেটের মূল্য ধরা হয়েছে ৬৭৩ টাকা। ৭০০ প্যাকেট বিতরণে খরচ হয়েছে ৪ লাখ ৭১ হাজার ১০০ টাকা। বাকি ১২ লাখ ৭৮ হাজার ৯০০ টাকার ত্রাণ সামগ্রীর কোন হিসাব মিলছে না। প্রতি প্যাকেটে ছিল ৭ কেজি চাল, হাফ কেজি লবণ, ১ কেজি চিনি, ১ কেজি ডাল, ১০ টাকা মূল্যের সাবান ১টি। মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন পিপিআর নিয়ম নীতি মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে শুকনা খাবারের যে মাস্টার রোল করা হয়েছে তাতে ইজিপিপির লেবারের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সোনাতলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, অফিস ফাইল নোটে প্রতিটি ইউনিয়নে ৩৬৪টি শুকনা খাবারের প্যাকেট বিতরণের কথা থাকলেও বাস্তবে ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ তাদের মালামাল বুঝিয়ে পাওয়া রেজিস্টারে ১০০ প্যাকেটের কথা উল্লেখ করেছেন। সোনাতলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকা জানান, এ বিষয়টি করোনার সময়ের। তখন তিনি অন্য উপজেলায় কর্মরত ছিলেন। তবে অফিসের ফাইল নোট ও বিতরণ রেজিস্টারের ১০০ প্যাকেটের কথা উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়াও সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জুলাই ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট উপজেলায় করোনাকালীন মানবিক সহায়তার আরও ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। এর মধ্যে গত ১৮ আগস্ট ব্যাংক থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। যা দিয়ে তিনি ৫০টি শুকনা খাবারের প্যাকেট ক্রয় করেন। এখানে প্রতিটি প্যাকেটের মূল্য ধরা হয়েছে ৭০০ টাকা। এতে করে দেড় লাখ টাকার মধ্যে ৫০ প্যাকেটে ব্যয় হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। অবশিষ্ট ১ লাখ ১৫ হাজার টাকার হিসাব নেই। এই পরিমাণ অর্থ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে রয়েছে।  এ বিষয়ে তৎকালীন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) সারওয়ার আলম জানান, এ ধরনের গড়মিল লক্ষ্য করার পর তিনি মাস্টার রোলে স্বাক্ষর করেননি। এছাড়াও তিনি আরও জানান, মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারি কোনো নিয়ম নীতি মানা হয়নি। সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন জানান, প্রতিটি ইউপি চেয়ারম্যানদের শুকনা খাবার বিতরণের পাশাপাশি ভ্রাম্যমান কর্মহীন ও গুচ্ছ আবাসনবাসীদের মাঝে এ ধরনের শুকনা খাবার ও নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। সরকারি নিয়মমাফিক বা নির্দেশ মতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। একটি মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

সর্বশেষ খবর