সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

পুকুরে হেলে পড়া মসজিদেই নামাজ পড়ছেন মুসল্লিরা!

নাটোর প্রতিনিধি

পুকুরে হেলে পড়া মসজিদেই নামাজ পড়ছেন মুসল্লিরা!

নাটোর শহরতলির বড়ভিটা দাদাপুর জামে মসজিদের দেয়ালের একাংশ পুকুরে ধসে পড়েছে দুই মাস আগে। পুরো মসজিদেই দেখা দিয়েছে ফাটল। মসজিদের টিনের চালটি বাঁশ দিয়ে ঠেকনা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছেন স্থানীয় মুসল্লিরা। শহরের পিটিআই মোড় থেকে আধা কিলোমিটার দূরে বাইপাস সড়ক সংলগ্ন দাদাপুর রোডে মসজিদটির অবস্থান। দাদাপুর সড়কের দুই পাশে সরকারি জায়গায় দুই শতাধিক পরিবারের বসবাস। তারাই এই মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি। এলাকাবাসীরা জানান, বিগত ৯০-এর দশকে নিজেদের অনুদানে এবং কয়েকজন বিত্তবানের সহায়তায় মসজিদটি গড়ে তোলা হয়। দুই মাস আগে মসজিদটির একাংশের দেয়াল পুকুরে ধসে পড়ে। একদিকে অনেকটা হেলে পড়েছে। ওই অঞ্চলে আর কোনো মসজিদ না থাকায় হেলে পড়া মসজিদেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। সরেজমিন দেখা যায়, মসজিদের একাংশ ধসে পড়ায় দেয়ালে এবং মেঝের বিভিন্ন অংশে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। টিনের চাল বাঁশ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। মসজিদটি এতটাই পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে, সেখানে আর নামাজ আদায় করার কোনো সুযোগ নেই। পুকুরে ধসে পড়ায় মসজিদের মেঝের অংশসহ বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে ফাটল। তবুও উপায়হীন এই গ্রামের মুসল্লিদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আহ্‌বান করে দেওয়া হয় আজান। সব কিছু ছাপিয়ে পাঁচ ওয়াক্তেই জামাতের ব্যবস্থা হয় প্রতিদিন। তবে সেই জামাতে মুসল্লির সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। স্থানীয় মুসল্লি করিম হাওলাদার বলেন, অধিক সওয়াবের আশায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ি। তবে আশপাশে মসজিদ থাকলে এমন ঝুঁকি নিতেন না বলে জানান তিনি।

মুসল্লি মালেক শেখ বলেন, দিনের পর দিন, যেভাবে মসজিদটি হেলে পড়ছে, যে কোনো সময় পুরোটা ধসে পড়তে পারে পুকুরের বুকে। মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন জানান, শুধু জীবনের ঝুঁকি নয়, নামাজে দাঁড়ানোর সময় নিজে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারলেও সেজদায় গিয়ে দেহের ভারসাম্য রাখা অনেক কষ্টের হয়ে পড়ে। রুকুতে গেলে কিছুটা হেলে পড়তে হলেও সেজদায় গেলে মনে হয় পুরো দেহ একেবারে গড়িয়ে পড়বে। মসজিদটি নতুনভাবে তৈরি করতে অনেক টাকার দরকার যেটা আমাদের এখানকার গরিব অধিবাসীদের নেই। টাকার অভাবে যে কোনো রকমের অবকাঠামো তৈরির কাজে হাত দিতে পারছে না তারা। মসজিদের ইমাম সুমন আলী জানান, নামাজের জন্য জামাত বাধা হলে সেই সময় মুসল্লিদের মনে বিপদের শঙ্কা না থাকলেও স্বজনরা উৎকণ্ঠায় থাকেন। মসজিদটি দ্রুত সংস্কার করা দরকার। কিন্তু অর্থাভাবে তা করা সম্ভব হচ্ছে না। মসজিদের দেয়াল ধসে পড়ায় পুরো মসজিদে ফাটল দেখা দিয়েছে। সবকিছু ছাপিয়ে পাঁচ ওয়াক্তই জামাতের ব্যবস্থা হয় প্রতিদিন। তবে সেই জামাতে মুসল্লির সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। মুসল্লি সামাদ শেখ বলেন, দিনের পর দিন যেভাবে মসজিদটি হেলে পড়ছে তাতে যে কোনো সময় পুরোটা ধসে পড়তে পারে। তাই প্রয়োজন মসজিদটির সংস্কার। কিন্তু এখানকার বাসিন্দারা সবাই দিনমজুর। ইচ্ছে থাকলেই আল্লাহর ঘরের সংস্কারের জন্য তারা কিছুই করতে পারছেন না। নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহম্মেদ বলেন, নতুন করে মসজিদ নির্মাণে বিত্তশালীদের এগিয়ে আসা উচিত। তবে তাদের পক্ষ থেকে যতটুকু পাশে থাকা যায়, তেমনটা থাকবেল বলে জানালেন জেলা প্রশাসক। নাটোর সদর উপজেলার বড় হরিশপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর দাদাপুর রোড জামে মসজিদের উন্নয়নের জন্য দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইদের কাছে আর্থিক অনুদান ও সাহায্য আবেদন করেছেন ওই মসজিদের সভাপতি এবং সম্পাদক। সবাই যদি আল্লাহর রাস্তায় দান করেন তাহলে আল্লাহর ঘর মসজিদ এ কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে জানান স্থানীয় অধিবাসীরা।

সর্বশেষ খবর