ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় দিনরাতে চুরির ঘটনা ঘটছে। খাবারের সঙ্গে ঔষধ মিশিয়ে ও ঘুমের ওষুধ স্প্রে করে বাড়ির লোকজনকে অচেতন করে এসব চুরি সংঘটিত করছে। স্থানীয় চোরের কয়েকটি সক্রিয় সংঘবদ্ধ দল। এতে চুরির আতঙ্ক বিরাজ করছে পুরো উপজেলাজুড়ে। চোরদের হাত  থেকে রক্ষা পেতে লাঠিসোঁটা নিয়ে রাত জেগে পাহারা বসিয়েছে এলাকাবাসী। শনিবার রাত ৯টায় উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের সৌলাপুকুর গ্রামে এ দৃশ্য দেখা গেছে। একদল যুবক সময় ভাগ করে নিয়ে রাতে বাড়ি-ঘর পাহারা দিচ্ছে। জানা গেছে, শুধুমাত্র গত অক্টোবর মাসের ১০ দিনেই বালিয়াডাঙ্গি দুওসুও ও পাড়িয়া ইউনিয়নে ৫টি দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১টি চুরি হয়েছে দিনের বেলায় অপর চারটি চুরি বাড়ির লোকজনকে অচেতন করে। বিগত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য  কেন্দ্রে চুরি, সাবেক ইউপি সদস্যের বাড়িতে ৩টি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। এলাকাবাসী বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করার পরও চুরির কোনো রহস্য উন্মোচন না হওয়ায় এসব ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। জনমনে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। এর ফলে নিজেদের সম্পদ রক্ষা করতে নিজেরাই টর্চলাইট ও লাঠি নিয়ে রাত  জেগে পাহারা শুরু করেছি। তবে স্থানীয় থানা পুলিশ বলছে চুরির ঘটনা ঠেকাতে তারা তৎপর রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই সব চুরির ঘটনার রহস্য উন্মোচন হবে। গত শুক্রবার, বৃহস্পতিবার ও বুধবার তিন দিনে উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের চার কিলোমিটারের মধ্যে ৩টি গ্রামে ৩ জনের বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি হয়েছে।

এদের মধ্যে সৌলাপুকুর গ্রামের গয়া প্রসাদের বাড়িতে ঘুমের ওষুধ স্প্রে ছিটিয়ে ৭ ভরি স্বর্ণ ও নগদ কয়েক লাখ টাকা, পানিশাল গ্রামের নাজমুল হকের বাড়িতে ৩ লাখ টাকা ও ৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং লোহাগাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক অতুল প্রসাদ সিংহের বাড়ি থেকে  মোবাইল ও আসবাবপত্র চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর আগে গত মঙ্গলবার বালিয়াডাঙ্গী-নেকমরদহ মহাসড়কের পাশে সমিরউদ্দিন স্মৃতি কলেজের বিপরীতে স্কুল শিক্ষক আসাদ আলীর বাড়িতে দুপুরে চোরেরা ৪ ভরি স্বর্ণ চুরি করে নিয়ে গেছে। পরের দিন দুওসুও ইউনিয়নের হাসান মেম্বারপাড়া এলাকার রাজু হোসেন ও তার চাচার বাড়ির  লোকজনকে অচেতন করে ৩ লক্ষাধিক টাকা চুরি হয়েছে। স্কুল শিক্ষক আসাদ আলী জানান, চুরির ঘটনা পুলিশকে জানানোর পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। এরপর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি থানায়। এ পর্যন্ত শেষ। কোনো ফল পায়নি। পাড়িয়া গ্রামের নাজমুল হক জানান, বাড়িতে চুরির পর থানায় লিখিতভাবে জানানোর পরও ২৪ ঘণ্টা পর পুলিশ আমার বাড়িতে এসেছে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে। এদিকে রাতে পাশের গ্রামে একইভাবে দুর্ধর্ষ চুরি হয়েছে। পরিবার নিয়ে চরম আতঙ্কে রয়েছি। সৌলাপুকুর গ্রামে রাত জেগে পাহারা দেওয়া যুবকরা জানান, চুরির ঘটনা ঠেকাতে সময় ভাগ করে নিয়ে আমরা ১৫ জন যুবক পাহারা দিচ্ছি। চুরি বন্ধ এবং পুলিশ ৩টি চুরির রহস্য উন্মোচন না করা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। পাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী রুবেল জানান, চুরির ঘটনায় এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। ঘটনাগুলো তদন্ত করে চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধারসহ চোরদের গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি। শনিবার রাতে পাড়িয়া ইউনিয়নে সংঘটিত দুটি চুরির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি হাবিবুল হক প্রধান, উপপরিদর্শক আব্দুস সোবহান। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে থানার ওসি হাবিবুল হক প্রধান বলেন, ঘটনাগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। পরিবারের সবার ঘুম ঘুম ভাব আসলে স্থানীয় চেয়ারম্যান অথবা থানায় অবগত করবেন। প্রয়োজনে আমরা পোশাক ছাড়া আপনাদের বাড়িতে এসে অবস্থান নিব। চোরদের ধরতে স্থানীয়দের সহযোগিতা চান তিনি।