মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

বায়োমেট্রিক কেনার ভুয়া ভাউচারে লোপাট ২০ লাখ টাকা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয়ের নামে লাখ লাখ টাকা লোপাট হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের স্লিপের বরাদ্দ থেকে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। উপজেলা শিক্ষা অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন না কিনেই ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে এ টাকা হাতিয়ে নেন তারা। সম্প্রতি জাজিরা উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনার সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাজিরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্লিপের বরাদ্দ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ডিজিটাল হাজিরা নিশ্চিতের জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনার নির্দেশ দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নির্দেশনার আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা ওই অর্থবছরের স্লিপের বরাদ্দ থেকে হাজিরা মেশিন  কিনে ভাউচার উপস্থাপন করেছে। স্লিপ বরাদ্দের কেনাকাটার সঙ্গে উপজেলা শিক্ষা অফিস সরাসরি জড়িত থাকে না। স্ব স্ব বিদ্যালয় নিজেরাই স্লিপের মালামাল ক্রয় করে থাকে এবং প্রতিটি বিদ্যালয়ে স্লিপের ক্রয়-সংক্রান্ত আলাদা আলাদা কমিটি রয়েছে। ওই সময়ে দায়িত্বে থাকা একাধিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও কয়েকজন শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়গুলোতে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয় করার কথা ছিল কিন্তু কোন মেশিন কিনবে- এ নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় বায়োমেট্রিক মেশিন কেনা হয়নি। বায়োমেট্রিক মেশিন না কিনে কীভাবে ভাউচার জমা হলো এবং তা পাস করানো হয়েছে- এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি ওই কর্মকর্তারা। জাজিরা উপজেলার ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘুরে কোথাও ডিজিটাল হাজিরা মেশিন খুঁজে পাওয়া যায়নি। অধিকাংশ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছাড়া অন্য শিক্ষকরা ডিজিটাল মেশিন ক্রয় করে বিল ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

 এ তথ্যই জানেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পরেও দুটি অর্থবছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনা হয়নি। এমনকি বরাদ্দ ফেরতও দেওয়ওা হয়নি। অনেক প্রধান শিক্ষক স্কুল থেকে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। কোনো কোনো প্রধান শিক্ষক অবসরে চলে গেছেন। বিষয়টি যে কারও কাছে অবশ্যই আত্মসাতের শামিল বলে মনে হবে। অভিযোগ করে তারা আরও বলেন, স্লিপের মালামাল ক্রয়ের জন্য ক্রয় কমিটি থাকলেও তাদের কোনো কাজে লাগানো হয় না। প্রধান শিক্ষকগণ উপজেলার কর্মকর্তাদের যোগসাজশে স্লিপের টাকা খরচ করে থাকেন। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক অন্য শিক্ষকদের এ বিষয়ে কিছুই জানান না। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা দিখা দিয়েছে। জাজিরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক মাস্টার ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয় না করেই ভুয়া ভাউচার তৈরি করে বিদ্যালয়গুলো টাকা উত্তোলন করেছে স্বীকার করে বলেন, কোন ধরনের বায়োয়োট্রিক মেশিন কিনবে- এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে আর মেশিন কিনতে পারেনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা। তবে মেশিন কেনার টাকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে জমা রয়েছে বলে দাবি করেন তারা। সরকারি কোনো টাকা উত্তোলনের পরে খরচ করতে জটিলতা তৈরি হলে সঙ্গে সঙ্গে তা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়ার বিধান রয়েছে কিন্তু দুই অর্থবছর পেরিয়ে গেলেও কেন ওই টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি এ প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি ওই শিক্ষক নেতারা। তবে টাকাটা লোপাট হয়নি বলে দাবি করেছেন তারা। ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয়ের বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর স্লিপের বরাদ্দের কেনাকাটায় স্বচ্ছতার প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। মালামাল না কিনে কীভাবে ভাউচার উপস্থাপন করা হয় এবং শিক্ষা অফিসাররা কোন স্বার্থে এসব ভাউচার পাস করেন- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। এসব ভুয়া ভাউচার উপস্থাপন করে সরকারি টাকা লোপাটের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান বিদ্যালয়-সংশ্লিষ্টরা। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সোবাহান মিয়া বলেন, ঘটনাটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের। আমি এ উপজেলায় যোগদান করেছি ২০২০ সনের অক্টোবর মাসে। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি ওই সময়ে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের কাছ থেকে জেনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। কেউ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। ভুয়া বিল ভাউচার দিয়ে কীভাবে বিল উত্তোলন করা হয়েছে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সর্বশেষ খবর