মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

পৌর নির্বাচনে বড় দুই দলেই বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

পৌর নির্বাচনে বড় দুই দলেই বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যেই একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। ফলে জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরাও। জানা গেছে, আগামী ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের দলীয় মেয়র প্রার্থী মো. মোখলেসুর রহমান, বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা যুবলীগের সভাপতি সামিউল হক লিটন ও জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি মো. আব্দুল হাকিম। অন্যদিকে সদর উপজেলা বিএনপি নেতা মো. নজরুল ইসলাম এবং বিদ্রোহী প্রার্থী পৌর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট ময়েজ উদ্দিন, সাবেক কাউন্সিলর শাহনেওয়াজ খান এবং সাবেক মেয়র মাওলানা আব্দুল মতিন, জেলা জাসদের সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মনির এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক শিবির নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল। জেলা যুবলীগের সভাপতি সামিউল হক লিটন বলেছেন, তিনি গত পৌর নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকেই মাঠে রয়েছেন। কিন্তু দল তাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তিনি পৌরবাসীর চাপে এবার প্রার্থী হয়েছেন।

সূত্রমতে, গত পৌরসভা নির্বাচনে ৩০ হাজার ভোট পেয়েও মাত্র ১ হাজার ভোটে পরাজিত হন লিটন। তার পর থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের একটি পক্ষকে (মণ্ডল গ্রুপ) সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে আসছেন। অন্যদিকে এবার দলীয় মনোনয়ন লাভকারী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলহাজ মো. মোখলেসুর রহমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো.                আব্দুল ওদুদের আশির্বাদসহ দলের বৃহৎ অংশকে সঙ্গে নিয়ে পৌর নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে কার্যক্রম শুরু করেছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় তিনি চলমান করোনা সংকটে প্রায় ৪০ হাজার পৌরবাসীকে খাদ্য সহায়তাসহ হিন্দু এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষকে উপহার সামগ্রী প্রদান করে লাইমলাইটে আসেন। এদিকে সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মইনুদ্দিন ম ল মৃত্যুবরণ করার পর কোণঠাসা হয়ে পড়েন মেয়র পদে মনোনয়ন বঞ্চিত সামিউল হক লিটন। পরিপ্রেক্ষিতে দলের মেয়র পদে মনোনয়ন লাভ করেন আলহাজ মোখলেসুর রহমান। ফলে মনোনয়নবঞ্চিত সামিউল হক লিটন তার সমর্থক ম ল গ্রুপের কতিপয় নেতার সঙ্গে আলাপ আলোচনার পর মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবার সিদ্ধান্ত নেন এবং মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তবে সামিউল হক লিটন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে লড়ে যাবেন। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, জেলা আওয়ামী লীগের ম ল গ্রুপের কতিপয় নেতা দলীয় প্রার্থী মোখলেসুর রহমানের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারণা চালালেও তারা নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী সামিউল হক লিটনের পক্ষে গোপনে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি মো. আব্দুল ওদুদ বলেন, দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে। সুতরাং দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করেই বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। এজন্য তাকে কোনো চিঠি দেওয়া হবে না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাকে সরাসরি বহিষ্কার করা হবে। এছাড়া যারা দলীয় প্রার্থী ছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কাজ করবে তাদেরকেও চিহ্নিত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্যদিকে বিএনপির একাধিক প্রার্থী প্রসঙ্গে একটি সূত্র জানায়, বিএনপির একাংশের নেতা কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশিদ হারুন এমপি মো. নজরুল ইসলামকে দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু তার এই সিদ্ধান্ত তার গ্রুপের অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। তাই হারুন পত্নী সৈয়দা আশরাফি পাপিয়ার ঘনিষ্ঠ পৌর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট ময়েজ উদ্দিন বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হওয়া সাবেক কাউন্সিলর শাহনেওয়াজ খান সিনাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে সাবেক বিএনপি নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র মাওলানা আব্দুল মতিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এদিকে বিদ্রোহী প্রার্থীরা কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। আর এতে করে বেকায়দায় পড়েছেন উভয় দলের সাধারণ সমর্থক ও ভোটাররা। তবে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে মেয়র পদে কে নির্বাচিত হচ্ছেন তা দেখার জন্য।

সর্বশেষ খবর