রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পারাপার

নদীতে সেতু না থাকায় বছরের পর বছর স্থানীয় এলাকাবাসীর একমাত্র ভরসা খেয়া নৌকা

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পারাপার

এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলার দারছিরা নদী পার হচ্ছে এলাকাবাসী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার খালগোরা বাজার সংলগ্ন দারছিরা নদীতে সেতু না থাকায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন দেড় লাখ মানুষ। প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়ায় পারাপার করতে হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। উপজেলার বড়বাইশদিয়া ও মৌডুবী ইউনিয়ন এবং পাশর্^বর্তী কলাপাড়া উপজেলার সঙ্গে রাঙ্গাবালী উপজেলার দেড় লাখ মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এখন এই খেয়া নৌকা। প্রতিদিন এখানকার কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ীরা ঝুঁকিপূর্ণ এই খেয়া পার হয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে আসা-যাওয়া করেন। এ ছাড়াও স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার অতিক্রম করে খালগোরা বাজার (ব্যবসায়িক বন্দর)। এ ছাড়াও রাঙ্গাবালী উপজেলা এবং খালগোড়া বন্দরকে ঘিরে রয়েছে স্কুল-কলেজ-মাদরাসা, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ব্যাংক-বীমা এবং বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। খালগোড়া বাজারের পাশেই দারছিরা নদীর অবস্থান। এর ওই পাড়ে বড়বাইশদিয়া ও মৌডুবী ইউনিয়ন। আর খালগোড়া বাজার সংলগ্ন একটি খেয়াঘাট। খেয়াটি পার হয়ে ওই দুই ইউনিয়নের নারী-পুরুষ অন্তত ৬০ হাজার মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটাতে হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীটি পার হতে হয় প্রতিনিয়ত। শীত মৌসুমে নদীটি নি®প্রাণ থাকলেও বর্ষা

মৌসুমে দারছিরা নদীটি ভয়াল রূপ ধারণ করে। মূল কথা বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে নদীটির সংযোগ অত্যন্ত কাছাকাছি হওয়ায় নদীটি মূল স্রোতে ফিরে যায়। ফলে ওই মৌসুমে সবাই নদী পার হতে ভয় পান। মাঝে মাঝে ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। তাই দারছিরা নদীর এই অংশে একটি ব্রিজ প্রয়োজন। এক দশকে খেয়া পার হতে গিয়ে অন্তত শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের আবদুর রহিম গাজী বলেন, ‘আমাগো দুর্ভোগ দেহার মতো মানুষ দেহি না! জোয়ারের সময় তুফান আর ভাটার সময় হাঁটু পরিমাণ পানি কাদার মধ্যে ওই পারে (উপজেলা সদরে) যাওয়া লাগে।’ রাঙ্গাবালী কলেজ ছাত্রী তাসফিয়া কেয়া বলেন, জোয়ারের সময় নদীর দিকে তাকালে বুক ভয়ে কেঁপে ওঠে! তখন সাহস হয় না যে নৌকায় উঠে কলেজে যাই। খালগোরা বাজার ব্যবসায়ী সাইদুল জানান, নৌকার পরিবর্তে একটি ব্রিজ নির্মাণ রাঙ্গাবালী বাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। যোগাযোগের সুব্যবস্থা না থাকায় তারা আজও বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হলে উপজেলার সর্বস্তরের লোকজনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হবে। বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, আমাদের এ ইউনিয়নে হাসপাতাল ক্লিনিক এমনকি কোনো এমবিবিএস ডাক্তারও নেই। গ্রামে মধ্যরাতে কেউ অসুস্থ হলে বা গর্ভবতীদের নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়, এমনকি দুর্ঘটনাও ঘটে। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। এ দাবি কেউ বাস্তবায়িত করেনি। এ জন্য এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, জরুরি ভিত্তিতে সেতুটি নির্মাণ করা হলে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এ দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে। এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মিজানুল কবির জানান, ব্রিজ না থাকায় বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন ও খালগোরা বাজারের ব্যবসায়ীসহ এলাকার সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর ওখানে একটি সেতু তৈরি করার প্রস্তাব করেছি।

সর্বশেষ খবর