বুধবার, ২০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

চলনবিলে মাছের সংকট

নাটোর প্রতিনিধি

চলনবিলে মাছের সংকট

নাটোরের চলনবিল ও হালতিবিল অধ্যুষিত নলডাঙ্গা, সিংড়া, গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলার ৪০টিরও বেশি স্থানে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের শুঁটকি উৎপাদন হচ্ছে। বিশেষ করে বোয়াল, টাকি, চিংড়ি, শোল, টেংরা, গুচি, পাতাসি, মলা ও পুঁটি মাছের শুঁটকি উৎপাদন করা হচ্ছে। এর মধ্যে পুঁটি মাছের শুঁটকির পরিমাণ বেশি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত এসব শুঁটকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও রপ্তানি হচ্ছে। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে এসব শুঁটকি মাছ। এতে করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন প্রায় ৩০০ জন শুঁটকি উৎপাদনকারী। পাশাপাশি এসব শুঁটকি চাতালে কর্মরত অন্তত ১ হাজার নারী-পুরুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন। জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৫০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্য হিসেবে যার পরিমাণ ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত মৌসুমে ৩১৯ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছিল। এবার মাছের উৎপাদন বেশি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ পরিমাণ শুঁটকি মাছ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্র আরও জানায় জেলার চার উপজেলায় ৪০টি চাতালে এসব শুঁটকি মাছ উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে গুরুদাসপুর উপজেলায় ১৫টি, নলডাঙ্গায় ১৪টি, বড়াইগ্রামে ৪টি ও সিংড়া উপজেলায় ৬টি স্থানে শুঁটকির চাতাল রয়েছে। এতে সম্পৃক্ত আছেন অন্তত ২৯৩ জন উৎপাদনকারী। আর এসব চাতালে সব মিলিয়ে কাজ করছেন অন্তত ১ হাজার নারী-পুরুষ। মৎস্য বিভাগের হিসাব মতে, প্রতি ৩ দশমিক ৫ কেজি কাঁচা মাছে ১ কেজি শুঁটকি উৎপাদন হয়। যার গড় মূল্য সময় ভেদে ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা কেজি। অর্থাৎ প্রতিমণ শুঁটকির দাম ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পড়ে। এতে মোট উৎপাদিত শুঁটকির দাম দাঁড়ায় ১৭ থেকে ২০ কোটি টাকা। স্থানীয় উৎপাদনকারীদের মতে, এবার ৫০ কোটিরও বেশি টাকার শুঁটকি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। যার সিংহভাগই রপ্তানি হবে ভারতে। প্রতিবছর বাড়ছে শুঁটকির দাম। উৎপাদন কম ও খরচ বেশি হওয়ায় এমনিতেই শুঁটকির বাজার অস্থির। বছর বছর বাড়ছে শুঁটকির চাহিদা। অথচ পাল্লা দিয়ে দেশে কমছে উৎপাদন। দেশে উৎপাদিত শুঁটকির সরবরাহ চাহিদার তুলনায় অনেক কম হওয়ায় এর দামও বেশি। ফলে ক্রমে আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ছে এই ব্যবসা। আমদানি করা শুঁটকির মান ও দাম দুটোই কম। চলনবিল এলাকায় ২৫০টি অস্থায়ী শুঁটকির চাতাল থাকলেও বর্তমানে আছে ১২০টি। কেননা চলন বিলের সর্বত্রই এখন মাছের সংকট ফলে কমতে শুরু করেছে শুঁটকি মাছের উৎপাদন। চাতাল মালিকদের সূত্রে জানা গেছে, চলনবিলের মাছের শুঁটকি আমেরিকা, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহরাইন, দুবাই, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ ২৫টি দেশে রপ্তানি করা হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা।

 কিন্তু বর্তমানে মাছের অপ্রতুলতার পাশাপাশি শুকানো শুঁটকি মাছ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই, ফলে অনেক সময় শুঁটকি মাছ নষ্ট হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। চাটমোহরের শুঁটকি ব্যবসায়ী আ. মতিন জানালেন, অগ্রহায়ণ মাসে পানি না শুকানো পর্যন্ত চাতালগুলো চালু থাকে। এ সময় শুঁটকি শুকানোর জন্য সহস্রাধিক পরিবার চাতালগুলোতে কাজ করেন। কিন্তু আগের মতো সেই কর্ম চঞ্চলতা নেই। কারণ এবার চলন বিলে পর্যাপ্ত মাছ ছিল না। মাছের সংকটের কারণে চলতি বছর শুঁটকির উৎপাদনও কম হবে বলে তিনি জানান। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, চলনবিলের মাছের সুনাম রয়েছে। এবার বর্ষার সময়টা কম ছিল। ফলে মাছের স্বল্পতা রয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, শুঁটকি মাছ এখন রপ্তানিকারক একটি পণ্য। সঠিক উপায়ে উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা গেলে সারা বছরই শুঁটকি মাছ বাজারজাত করা এবং মূল্যও অনেক বেশি পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, উৎপাদনে আর্থিক সহায়তা বাবদ ঋণ সুবিধা, সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ ও সোলার ড্রয়ার দিতে পারলে বর্ষাকালে শুঁটকির পচন রোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি সংরক্ষিত শুঁটকি সময়মতো বাজারজাত করার সুযোগ পাবেন তারা। বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তিনি মনে করেন এ অঞ্চলে শুঁটকি সংরক্ষণাগার ও বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর