শুক্রবার, ২২ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

দাম না পেয়ে হতাশ পানচাষিরা

হিলি প্রতিনিধি

দাম না পেয়ে হতাশ পানচাষিরা

দিনাজপুরের হিলিতে পানের চাহিদা না থাকায় ও ক্রেতা সংকটের কারণে হতাশ পানচাষিরা। তারা পানের দাম না পেয়ে পান বিক্রি করতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া পুঁজি হারানোর শংকায় রয়েছেনও তারা। এদিকে পানের দাম কমায় খুশি বাজারে পান কিনতে আসা পাইকাররা। হিলির ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা ঘাসুড়িয়া নন্দিপুর, মাধবপাড়া এলাকায় বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পানের বরজ গড়ে উঠেছে। এই এলাকার ৩৭ হেক্টর জমিতে ৩৬৫টি পানের বরজ রয়েছে, পুরো উপজেলার মধ্যে এই অঞ্চল শুধু পান চাষের ওপর নির্ভরশীল। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এই এলাকার পানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। গতবছর যে প্রতি পোয়া (৪০ বিরা) পানের দাম ছিল ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা সেই পান এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা থেকে শুরু ১ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত ভালো মানের পান। আর চিকন পান ১০০ থেকে ২০০ টাকা, অনেকে পানের ক্রেতা না থাকায় বিক্রি করতে না পারায় অনেকে পান ফেলেও দিচ্ছে। হিলির পানহাটিতে পান কিনতে আসা পাইকার আনিসুর রহমান বলেন, গতহাটের চেয়ে এই হাটে পানের দাম একটু কম। গত হাটে যে পান কিনেছিলাম ২০টাকা বিরা আজ সেই পান ১০টাকা বিরা। আর পানের দাম কম হলে আমাদের জন্য একটু সুবিধা হয়। আমরা বেশি বেশি করে পান কিনতে পারি তা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে পারি এতে করে লাভের পরিমাণটা একটু বেশি হবে।  পান কিনতে আসা অপর পাইকার আবদুল মান্নান বলেন, এই হাটে পানের বাজার একটু কম গতহাটের পানের বাজার বেশি ছিল বেশি দামের কারণে আমরা পান কিনতে পারিনি আজকে দাম একটু কমের কারণে একটু বেশি পরিমাণ কিনেছি। এরকম দাম থাকলে আমাদের জন্য একটু সুবিধা  তেমনি ক্রেতাদের সুবিধা হয়। বর্তমানে পানের দাম কম মূলত বরজে পচারিসহ পানের বিভিন্ন রোগ দেখা হওয়ায় পানের মান খারাপ হওয়ার কারণে আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে এই পান গেলেও এখন চাহিদা কমের কারণে পানের দাম কমছে। পান বিক্রি করতে আসা ধরঞ্জয় বর্মন বলেন, পানের বাজার দিন দিন খারাপ হচ্ছে, গতহাটের চেয়ে এই হাটে পানের দাম পোয়া (৪০ বিরা) প্রতি ৪ থেকে ৫০০ টাকা নেই। আবহাওয়ার কারণে পানের বরজে গোড়ায় পচন ধরেছে। পানে দাগ ধরছে ফলে ঝরে পড়ছে পান।  আমরা ক্ষতির মুখে পড়ছি। আবার পানের গুণগতমান খারাপ হওয়ায়, বাজারে পানের দাম পাচ্ছি না। বাজারে পানের আমদানি বেশি হওয়ায় ও চাহিদা না থাকায় পানের ন্যায্যমুল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। পানের বরজ করতে বাঁশ সরঞ্জামসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বাড়লেও পানের দাম নেই এতে করে আমরা আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাচ্ছি। একবিঘা মাটির একটি বরজ করতে এক থেকে দেড় লাখ টাকার মতো খরচ হয় আর আমরা এখন পান বিক্রি করছি মাত্র ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মতো এতে করে আমাদের  লাভ তো দূরে থাক ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো লোকসান হচ্ছে। অপর পান বিক্রেতা চন্দন কুমার ও আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা পান চাষ করে এখন যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে যা বলার মতো নয়। হাটে পান বেচাকেনা নেই বললেই চলে, সকাল থেকে পান নিয়ে হাটে এসে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা বসে থাকলেও পান বিক্রি হচ্ছে না।

আবহাওয়ার কারণে না কি কারণে আমাদের পান একেবারেই চলছে না বাজারে পানের আমদানি বেশি কিন্তু ক্রেতা নেই এতে করে আমাদের পানচাষিদের খুব সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এই পান কি আমাদের চলবে কি চলবে না, লাভের আশায় পানের বরজ করে এখন তো পান আমাদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক পোয়া চিকন পান বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা অথচ সেই এক পোয়া পান বরচ থেকে তুলতে আমাদের খরচ হচ্ছে ২০০ টাকা সেই টাকাও উঠছে না। হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ড. মমতাজ সুলতানা বলেন, আসলে করোনাকালীন সময়ে বাজার সেভাবে না চলার কারণে কৃষকরা তাদের পানগুলো বরজ থেকে না উঠিয়ে বরজেই রেখে দিয়েছিলেন। বর্তমানে একসঙ্গে সব কৃষক তাদের বরজ থেকে পান উত্তোলন করার কারণে একসঙ্গে অনেক পান বাজারে আসার কারণে হয়তোবা পানের দামটা কমে গেছে। আমরা আশা করছি এটাও খুব দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। আমাদের এই অঞ্চলে পান সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই তবে কৃষকদের দরকার হলে তারা গাছেই তাদের পানগুলো বেশি দিন রেখে সংরক্ষণ করে থাকেন।

 

সর্বশেষ খবর