রবিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

রেলস্টেশনে বাড়েনি সেবার মান

মো. শামিম কাদির, জয়পুরহাট

রেলস্টেশনে বাড়েনি সেবার মান

দেশে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা ও প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হয়। ১৮৮৪ সালে কলকাতা থেকে জলপাইগুড়ি পর্যন্ত ২৯৬ মাইল মিটারগেজ রেলপথ বসানোর কাজ শেষ হলে লোকজনের ওঠা-নামা এবং মালামাল আমদানি-রপ্তানির সুবিধার জন্য চার থেকে সাত মাইল পর পর স্টেশন স্থাপিত হয়। সে সময় জয়পুরহাটবাসীর জন্য পাঁচবিবিতেও স্থাপন করা হয় রেলস্টেশন। ব্যবসার সুবিধার্থে স্টেশন এলাকায় বসতি স্থাপন শুরু করেন অনেকে। বাড়তে থাকে এলাকার গুরুত্বও। প্রায় দেড় শ বছরের পুরনো এ রেলস্টেশনের বর্তমানে প্রতি মাসে আয় প্রায় অর্ধকোটি টাকা হলেও সেভাবে বাড়েনি যাত্রী সেবার মান। প্রয়োজনের তুলনায় কম আসন সংখ্যা, যাত্রীদের জন্য নেই শৌচাগারের ব্যবস্থা। ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে স্টেশনের দুটি বিশ্রামাগার। করোনায় দীর্ঘদিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পর খুললেও বসার চেয়ারগুলো জড়ো করে ফেলে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে স্টেশনের প্ল্যাটফরমটি অধিক নিচু। দাঁড়ানো অবস্থায় ট্রেন ও প্ল্যাটফরমের দূরত্ব বেশি হওয়ায় প্রতিবন্ধী, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীদের ট্রেনে ওঠা-নামায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া দৈর্ঘ্য কম হওয়ায় আন্তনগর ট্রেনের এসি বগিগুলো চলে যায় প্ল্যাটফরমের বাইরে। ফলে যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে ও নামতে বেশ কষ্ট হয়। অনেক সময় লাফ দেওয়ারও প্রয়োজন হয়। স্টেশনে ঢোকার মুখেই পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মিত ড্রেনে ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ থাকে। ফলে পচা পানির দুর্গন্ধে স্টেশনে যাত্রীদের টিকে থাকা দায়। এ স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন পাঁচটি আন্তনগর ও দুটি মেল ট্রেন যাত্রাবিরতি দেয়। পাশাপাশি মালবাহী ট্রেন নিয়মিত দাঁড়ায়। এসব ট্রেনে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, চিলাহাটি, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন কয়েক শ যাত্রী। অথচ এ জেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষের যাতায়াতের জন্য এ স্টেশনে ট্রেনের বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম। ঢাকায় যাতায়াতকারী দ্রুতযান ও একতা এক্সপ্রেস নামক দুটি আন্তনগর ট্রেনে প্রতিদিন রয়েছে মাত্র ২৩টি আসন। দেশের অন্য জায়গায় যাতায়াতকারী আরও তিনটি বরেন্দ্র, তিতুমীর ও বাংলাবান্ধা আন্তনগরসহ মোট পাঁচটি ট্রেনে মাত্র ৮০টি আসনের বিপরীতে প্রতিদিন টিকিট কাটছেন গড়ে দুই শতাধিক যাত্রী। ফলে এ অবস্থায় টিকিট কেটে আসন না পেয়ে দাঁড়িয়ে থেকে অথবা গেটে বসেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। অভিযোগ রয়েছে, ট্রেনের টিকিট প্রদান কার্যক্রম অনলাইনে না হয়ে হাতে লেখা হওয়ায় নয়-ছয় করেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় বহিরাগত লোক দিয়েও স্টেশন পরিচালনা করেন। এদিকে এক পাশের প্ল্যাটফরমের ওপরে ছাউনি থাকলেও আরেক পাশ এখনো খোলা আকাশের নিচেই। অপরিকল্পিত ওভার ব্রিজ থাকলেও তার সংযোগ নেই দুই প্ল্যাটফরমের সঙ্গে। ফলে যাত্রীরা ওভারব্রিজে না উঠে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেললাইনের ওপর দিয়ে পার হচ্ছেন। এ ছাড়া ওভারব্রিজটি আবার দখলে থাকে ভবঘুরে, মাদকসেবী, বখাটেদের হাতে। এমন অসংখ্য সমস্যার কথা মাথায় রেখেই প্রতিদিন যাতায়াত করতে হচ্ছে যাত্রীদের। পাঁচবিবি পৌর এলাকার দমদমা এলাকার সাহাদত হোসেন, মাহাতাস মঞ্জিল এলাকার আবু সাইদ, ইনামুলসহ অনেক যাত্রী বলেন, পাঁচবিবি স্টেশন থেকে আমরা যাত্রীসেবা পাচ্ছি না। প্রধান সমস্যা ট্রেনের পাদানি থেকে প্ল্যাটফরম অধিক নিচু হওয়ায় যাত্রীদের ট্রেনে নামতে ও উঠতে বেশ কষ্ট হয়। শিশু ও রোগীদের ক্ষেত্রে কষ্ট অধিক। এজন্য প্ল্যাটফরমটি আর একটু উঁচু করলে সবার জন্য ভালো হয়। তারা অভিযোগ করে বলেন, আমরা যখনই টিকিট কাটতে যাই সিট পাওয়া যায় না। কালোবাজারির মাধ্যমে অনেক আগেই টিকিট শেষ হয়ে যায়। একটু বেশি টাকা দিলেই সিট পাওয়া যায়। স্টেশনে চোর-পকেটমারের উপদ্রব দেখা যাচ্ছে। ট্রেনে ওঠা-নামার সময় মূল্যবান জিনিসপত্র মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার, মানিব্যাগ খোয়া যাচ্ছে। বিশ্রামাগারগুলো হয়েছে ব্যবহারের অনুপযোগী। স্টেশনে কোনো টয়লেট নেই। এজন্য খুবই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ওভারব্রিজের সঙ্গে দুই প্ল্যাটফরমে সংযোগ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ বলেন, ব্যাপারগুলো ইঞ্জিনিয়ারস বিভাগের বিষয়। তারাই ব্যাপারগুলো নিয়ে ভালো বলতে পারবেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম ফিরোজী বলেন, পাঁচবিবি স্টেশন গুরুত্বপূর্ণ। এ স্টেশনের সমস্যা আমাদের নজরে আছে। বাজেটেরও একটা ব্যাপার আছে। তবে যত দ্রুত সম্ভব স্টেশনের সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে।

সর্বশেষ খবর