মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

মাগুরায় ৩ হাজার হেক্টরে বিনা ধানের চাষ

রাশেদ খান, মাগুরা

মাগুরায় ৩ হাজার হেক্টরে বিনা ধানের চাষ

বছরে চারটি ফসল আবাদের ক্ষেত্রে মাগুরার কৃষকদের কাছে বিনা-১৭ নামের ধান অত্যন্ত উচ্চ ফলনশীল ও স্বল্পমেয়াদি জাত হিসেবে ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। জেলায় এ বছর ২ হাজার ৮৮২ হেক্টর জমিতে এই ধান চাষ হয়েছে। এই ধান আবাদে সার ও পানির ব্যবহার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম। পাশাপাশি সাধারণ জাতের তুলনায় ফলন দেড়গুণ। মাগুরা সদরের দারিয়াপুর গ্রামের কৃষকভক্ত কুমার বিশ্বাসসহ অন্যরা জানান, এই ধানে হেক্টর প্রতি ৬ থেকে ৭ টন ফলন হয়। অন্যান্য ধানের তুলনায় খরা সহিষ্ণু এই ধানে সেচ খরচ ৪০ শতাংশ কম। পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় কীটনাশকের তেমন খরচ নেই। পাশাপাশি ইউরিয়া সারের খরচ ৩০ শতাংশ কম। যেহেতু এই ধান ১১০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে পেকে যায় এ কারণে কৃষকরা স্বল্পসময়ে ডাল জাতীয় ফসল আবাদ করে। বছরে ৪টি ফসল ফলাতে পারে। বছরের জুলাই ও আগস্টে এ ধান আবাদের সময়। যা অক্টোবরেই উঠতে শুরু করে। সাধারণ জাতের তুলনায় ফলন দেড়গুণের বেশি। মাগুরা পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহাম্মদ শেফাউর রহমান জানান, ‘আমাদের দেশের কৃষকরা বোরো ধানের উৎপাদন কমাতে চায় না। ফলে দেশে ডাল ও তেল ফসলের অনেক ঘাটতি রয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ৪৫ লাখ কোটি টাকার তেল বাহির থেকে আমদানি করতে হয়। স্বল্পমেয়াদি বিনা ধান-১৭ কৃষকরা আবাদ করলে তারা বোরোসহ অনায়েসে ডাল ও সরিষা আবাদ করতে পারবে। এতে করে ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানো সম্ভব। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায়  সারা দেশে কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল জাতের এ ধানসহ অন্যান্য ফসলের বীজ সংরক্ষণ, চাষাবাদ কৌশল নিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। বিনা ধান-১৭ জাতের ধান স্বল্প মেয়াদি ও উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় কৃষকরা বছরে ৪টি ফসল আবাদ করতে পারছে। ফলে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। এছাড়া আশ্বিনে কৃষকদের গোলায় ধান উঠছে, শ্রমিকরা কাজ পাচ্ছে, আগাম সরিষা-মসুর চাষ করে অনেক বেশি আয় করতে পারছে কৃষক। ফসলের নিবিড়তা বাড়ার কারণে আমাদের দেশে কৃষি অর্থনীতির বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। বছরে ৪টি ফসল উৎপাদনের যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে বিনা ধান-১৭ উদ্ভাবনের মাধ্যমে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা অনেকাংশে সহজ হয়েছে।’ বিনা ধান-১৭ এর উদ্ভাবক ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণত স্থানীয় জাতের আমন ধানের জীবনকাল ১৬০-১৭০ দিন এবং গাছ লম্বা হওয়ায় ঢলে পড়ে। দীর্ঘ জীবনকাল বিশিষ্ট হওয়ায় দেশের অধিকাংশ অঞ্চলের কৃষকরা বছরে দুটির বেশি ফসল চাষ করতে পারে না। তাই গবেষণার মাধ্যমে আমন মৌসুমের জন্য উচ্চ ফলনশীল ও স্বল্প জীবনকাল বিশিষ্ট বিনা ধান-১৭ ধানের জাত আবিষ্কার করা হয়েছে।  বিনা ধান-১৭ এর জীবনকাল ১১২-১১৮ দিন। গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ৬.৮ টন। যা বিঘা প্রতি ২৩ মণ। বিনা ধান-১৭ জাতের ধানে পানি কম লাগার কারণে একে গ্রিন সুপার রাইস নামেও অভিহিত করেছেন অনেকে। এ জাতের ধানে ইউরিয়া সার এক-তৃতীয়াংশ ও সেচ ৪০ শতাংশ কম লাগে। ধানের প্রতি শীষে ২০০-২৫০ টি দানা থাকে এবং ফলন আশাব্যঞ্জক হওয়ায় কৃষকের জন্য এ জাতের ধান চাষ খুবই লাভজনক। প্রতি বিঘায় প্রায় ২২-২৫ মণ ফলন হয়ে থাকে। অন্যান্য ধানের তুলনায় আবাদে ২-৩ হাজার টাকা খরচ কম হয়। আমাদের লক্ষ্য ফসলের নিবিড়তা বাড়ানো। একজন কৃষক যেন বছরব্যাপী ফসল আবাদ করে বেশি মুনাফা পায়। প্রচলিত জাতের আমন ধানের জীবনকাল ১৬০ থেকে ১৭০ দিন। আমরা সেটি কমিয়ে ১১২ থেকে ১১৮ দিনে নিয়ে এসেছি। আমরা ফসলের নিবিড়তা বাড়াতে পারলে ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষকের আয় দ্বিগুণ করতে পারব।’ এই ধানটি ‘মেগা ভ্যারাইটি’ হবে বলেও জানান এই বিজ্ঞানী।

সর্বশেষ খবর