বুধবার, ৩ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যত অনিয়ম

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যত অনিয়ম

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবায় চরম বিঘ্ন ঘটছে। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা থেকে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করছেন। এহেন অবস্থা জানিয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিভিল সার্জনসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ কতিপয় কর্মকর্তা করোনাকালীন সিএইচসিপি ও স্বাস্থ্য সহকারীদের বরাদ্দের সুরক্ষা সামগ্রী লোপাট করেছেন। করোনা রোগী ভর্তি না করে হাসপাতালে ভর্তি দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমএইচভি পদে নিয়োগ বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগ প্রদান করে ৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহে মাইকিং না করেই মাইকিংয়ের টাকা আত্মসাৎ করেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবন মেরামত কাজে ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতি ও নিয়ম বহির্ভূতভাবে হাসপাতালের ট্রমা সেন্টার ভেঙে নিজস্ব অফিস রুম তৈরি করেছেন যেটি একটি হলরুমের সমান। ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে অর্থের বিনিময়ে ঠিকাদারকে অনৈতিক সুবিধা প্রদান করেছেন। জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচিতে আপ্যায়নের জন্য বরাদ্দকৃত ১৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ভ্যাট ও অডিটের নামে সব ধরনের প্রশিক্ষণে সম্মানী ভাতা থেকে শতকরা হারে টাকা কেটে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সবশেষ জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে উল্লাপাড়া উপজেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কেজি স্কুল ও মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬ শতাধিক প্রতিষ্ঠান প্রধানের সমন্বয়ে শিক্ষকদের নিয়ে অ্যাডভোকেসি মিটিং করার কথা থাকলেও কোনো অ্যাডভোকেসি মিটিং করেননি। পরবর্তীতে গত ২৮ অক্টোবর জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ জোরদার ও ফলপ্রসূ করার নিমিত্তে সুপার ভিশন করার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের প্রশাসন-১ অধিশাখার ডা. মো. জাফরুল হোসেন পরিদর্শনে জানতে পারেন কোনো অ্যাডভোকেসি মিটিং করা হয়নি। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সদুত্তর দিতে না পারায় বিষয়টি সিভিল সার্জনকে অবহিত করা হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য জাতীয় কৃমি সপ্তাহের উদ্বোধনের দিন গত ৩০ অক্টোবর মাত্র ১৩০-১৪০ শিক্ষক নিয়ে নামকাওয়াস্তে অ্যাডভোকেসি মিটিং করেন। বাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের অবহিত না করে তাদের সম্মানী ও নাস্তার জন্য বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেন। অ্যাডভোকেসি না করায় শিক্ষার্থীদের কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়া নিয়ে শিক্ষকরা বিভ্রান্তে পড়েছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন রোগী ও স্বজনরা। এ ছাড়াও মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও অসদাচরণসহ বিনা কারণেই বেতন বন্ধের হুমকির মধ্যে রেখে স্বাস্থ্য বিভাগে নৈরাজ্য কায়েম করেছেন।

 এ অবস্থায় দুর্নীতিবাজ ডা. আনোয়ার হোসেনসহ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্যবিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। চকনিহাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান জানান, আমাদের অ্যাডভোকেসি সভায় আহ্বান করা হয়নি। যে কারণে শিক্ষার্থীদের কৃমির ওষুধ খাওয়াতে বিকল্প অন্য চিকিৎসকের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে উল্লাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগগুলো শোনেন। এ বিষয়ে কোনো কথা বলবেন না বলে মুঠোফোন কেটে দেন। সিভিল সার্জন ডা. রামপদ রায় জানান, আমি কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে অ্যাডভোকেসি সভা না করায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা আমাকে অবহিত করেছেন। পরবর্তীতে ৩০ তারিখে অ্যাডভোকেসিং মিটিংটি করার কথা বলা হয়েছিল কিন্তু করেছে কি না আমাকে আর জানানো হয়নি।

সর্বশেষ খবর