শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বামীকে হত্যার ছবি নিয়ে বিচারকের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

মুখে টেঁটা বিদ্ধ করে স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। মুখে এঁটে থাকা টেঁটাবিদ্ধ ছবি নিয়ে আদালতে দাঁড়িয়ে যান ফাতেমা বেগম (৫৩)। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ূন কবীরের আদালতে। আদালতসূত্র জানায়, ফতুল্লার বক্তাবলী আকবরনগর এলাকার হত্যা ও ধর্ষণসহ ২২ মামলার আসামি ওসমান গনি নারায়ণগঞ্জের নারী সাংবাদিক মণি ইসলামকে মারধরের ঘটনায় জামিন আবেদন করেন। ওই সময় ফাতেমা বেগম নামে এক নারী আদালতে বিচারকের উদ্দেশে হাতে স্বামীর  টেঁটাবিদ্ধ ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘স্যার! এই আসামিকে ছাড়বেন না। এই যে দেখেন সে আমার স্বামীর মুখে টেঁটা বিদ্ধ করে হত্যা করেছে। সে জামিন পেলে আমরা আতঙ্কে থাকব।’ এ           সময় বিচারক মহিলাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কার কথা বলছেন?’ মহিলা প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘ওই যে আসামি ওসমান গনি’।

পরে বিচারক দুপুরের পর দুর্ধর্ষ খুনি ওসমান গনির জামিন শুনানির আদেশ দেবেন বলে জানান।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি হাছান ফৌরদৌস জুয়েল বলেন, ‘ওসমান গনি দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে শুধু হত্যা মামলাই রয়েছে সাতটি। আদালতে হত্যা মামলার বাদী এক নারী বিচারককে তার স্বামী হত্যার ছবি দেখিয়ে বিচার দাবি করেছেন।’ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আদালতের কোর্ট পরিদর্শক আসাদুর রহমানও।

কান্নায় ভেঙে পড়া ফাতেমার দায়ের করা মামলাসূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে ৯ আগস্ট আকবরনগরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ওসমান গনি মাথায় টেঁটা বিদ্ধ করে জয়নাল আবেদীন ম-লকে হত্যা করেন। বাবা সামেদ আলী ও ছেলে ওসমান গনি এবং তার লোকজন জয়নাল আবেদীনের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। চাঁদা দিতে বরাবরের মতোই অসম্মতি জানান জয়নাল। এতে ক্ষিপ্ত ছিলেন সামেদ আলী ও তার ছেলেরা। ১০ লাখ টাকার চাঁদা না পেয়ে সামেদ আলীর নির্দেশে জয়নালের ওপর হামলা চালিয়ে তার মুখের মধ্যে টেঁটা বিদ্ধ করে তারা। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয়নাল মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় সামেদ আলী (৬০), রাজীব (২৬), আরিফ (৩০), ওসমান গনি (৩৬), সজীব (২২), হৃদয় (১৮), আবুল হোসেন (৩৬), আলমগীর (৪২), আতিক (১৮), দিলু (৪৫), আলী হোসেন (৫৫), সুজন (২৫), সালাম (৫০), জুয়েল (২৬)সহ অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।

আদালত থেকে বের হয়ে ফাতেমা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আমার স্বামীকে প্রকাশ্য দিবালোকে এই ওসমান গনি মুখের মধ্যে টেঁটা বিদ্ধ করে হত্যা করে। তিনটি বছর যাবৎ আদালতে দৌড়াচ্ছি। আমি পরিষ্কার বলতে চাই এই ওসমান গনির নামে সাত থেকে আটটি মার্ডার মামলা আছে। আমি মামলা চালাচ্ছি বলে প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি পাচ্ছি। শুনলাম এমন একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী আটক হওয়ায় এলাকায় শান্তি বিরাজ করছে। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। ও যেন জেল থেকে ছাড়া না পায়। দয়া করে আপনারা সাংবাদিক সমাজ নীতিকে বিসর্জন দিয়ে ওসমান গনিকে ভালো মানুষ হিসেবে সাজাবেন না। আপনাদেরও ছেলেমেয়ে আছে। আমি জীবনে রান্নাঘর ছাড়া কিছুই চিনতাম না। এখন আদালতে যাই আর ওসমান গনিদের হুমকি পাই। একজন জনপ্রতিনিধি আছে আল্লাহ তার বিচার করবে। তিনি সেসব ঘটনার হোতা। তার নাম এখন বলব না। প্রেস কনফারেন্স করে বলব।’

প্রসঙ্গত, ২৩ অক্টোবর সাত হত্যা ও ধর্ষণসহ ২২ মামলার আসামি সামেদ আলীর ছেলে সন্ত্রাসী ওসমান গনি একটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক মণি ইসলামের পেটে লাথি মেরে গুরুতর আহত করেন। এ ঘটনায় সেদিনই মণি ইসলাম বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। ২৭ অক্টোবর ভোররাতে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ওসমান গনিকে র‌্যাব-১১ বক্তাবলীর দুর্গম অঞ্চল লাল মিয়ার চর থেকে আটক করে।

 

সর্বশেষ খবর