রবিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

৬০০ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা সুপারিতে

♦ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের ১২টি দেশে সুপারির চাহিদা রয়েছে ♦ প্রতি বছর সুপারি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে

লক্ষীপুর প্রতিনিধি

৬০০ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা সুপারিতে

লক্ষীপুরে উৎপাদিত সুপারি থেকে এবার প্রায় ৬০০ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিভাগ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাই মুক্ত পরিবেশ পাওয়ায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। একই সঙ্গে বাজার মূল্য ভালো থাকায় বাগানিরাও বেশ খুশি। তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে সুপারি বেচাকেনায়। নতুন উদ্ভাবিত চারা ফেলে আগামীতে আরও ভালো ফলনসহ দ্বিগুণ লাভের সম্ভাবনা রয়েছে এ জেলায়। জানা যায়, সঠিকভাবে চারা লাগালে ও যত্ন নিলে ছয় থেকে সাত বছরে সুপারির ফলন আসতে শুরু করে। তবে বেশি ফলন ধরে ১০ থেকে ১২ বছরের পর থেকে। সুপারি গাছ ২০ থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। একটি গাছে বছরে ৩ থেকে ৫টি ছড়া আসে। গাছে ফুল আসার পর ৯ থেকে ১০ মাস লেগে যায় ফলন পাকতে। প্রতি ছড়াতে ৫০ থেকে ১৫০টি পর্যন্ত সুপারি থাকে। আগস্ট থেকে সুপারি পাকতে শুরু করে। মার্চ পর্যন্ত সুপারি চলে সংগ্রহ। এতে হেক্টরপ্রতি ১ থেকে ৭ মেট্রিক টন পর্যন্ত শুকনো সুপারি পাওয়া যায়।

সুপারি এ জেলার অর্থকরী ফসলের মধ্যে একটি অন্যতম ফসল। অর্থকরী ফসল হিসেবে ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে লক্ষীপুর জেলাব্যাপী প্রতিটি বাড়ির আশপাশে, প্রবেশ পথে, পুকুরপাড়ে, রাস্তার ধারে সারি সারি সুপারি গাছের দেখা মেলে অহরহ। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলার ৫টি উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। এসব বাগানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাই মুক্ত পরিবেশ পাওয়ায় এবার ১৭ হাজার মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছে তারা। বর্তমানে সুপারি পাড়া, বাড়িতে ওঠানো, বেচাকেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার অধিকাংশ মানুষ। বিভিন্ন হাট-বাজারে সুপারিতে এখন ভরপুর। জেলার সবচেয়ে বড় হাট বসে সদরের দালাল বাজার ও রায়পুরের হায়দারগঞ্জ বাজারে। এ ছাড়া প্রায় সব হাট-বাজারে বেচাকেনা হয় সুপারি। এ অঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে এখন সুপারি নিয়ে ব্যস্ত সবাই। এখানে উৎপাদিত সুপারি ভালো মানের ও সুস্বাদু হওয়ায় এর বেশ চাহিদা রয়েছে। এখানকার সুপারি যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গুনিয়া, কুমিল্লা, রংপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। জেলায় উৎপাদিত সুপারি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও যাচ্ছে। বর্তমানে কেউ বিক্রি করছেন কেউবা কিনছেন। আবার কেউ প্রক্রিয়াজাত করে কিছু দিন পর আরও বেশি দামে বিক্রি করার প্রত্যাশায় রয়েছেন। বর্তমানে প্রতি পণ (৮০ পিস) সুপারি বিক্রি হচ্ছে-১২০ থেকে ১৪০ টাকা। করোনার এই ক্রান্তিকালে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানান বাগানিরা। পাশাপাশি ভালো দাম পেয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে বলে জানান। কেউ বাগান মালিকের কাছ থেকে ইজারা নেন আবার কেউ পরিচর্যায় অর্থ আয় করেন। এ সময়ে সুপারি পাড়ায় শ্রমিক খেটেও অনেকের বাড়তি আয় হয় বলে জানান। এদিকে সুপারির নতুন উদ্ভাবিত জাত নিয়ে নতুন সম্ভাবনাসহ সুপারি বিপ্লব ঘটানোর প্রত্যাশায় রয়েছেন জেলাবাসী। এ জাতের সুপারি বছরে দুবার ফলন দেওয়ার সংবাদ জানলেও তা এখনো পোঁছ্য়ানি। তবে এসব চারা সরবরাহ হলে দ্বিগুণ অর্থ আয়ের স্বপ্ন দেখছেন বলে জানান বাগানিরা। এদিকে সুপারির সম্ভাবনা নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, সুপারিতে রোগবালাই কম থাকা ও পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এবার ৬০০ কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন হবে জেলায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে নতুন একটি চারা উদ্ভাবন করেছে যা কৃষকদের সরবরাহ করা হলে বছরে দুবার সুপারি পাবে চাষিরা। এতে অর্থনৈতিক সবধা আরও বাড়বে বলে মতপ্রকাশ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর