রবিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

গারো পাহাড়ে বন্যহাতির তান্ডব!

শেরপুর প্রতিনিধি

গারো পাহাড়ে বন্যহাতির তান্ডব!

ভারতের মেঘালয় রাজ্য ঘেঁষা শেরপুর জেলার তিনটি উপজেলা শ্রীবরদী ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী। এসব এলাকায় এখন পাকা আমন ধান ও শীতের সবজিতে ভরপুর। শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাশে আছে অন্তত ৪০টি গ্রাম। কয়েক দিনে এসব গ্রামে ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা শতাধিক বন্যহাতি কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে প্রতিদিনই চালাচ্ছে তান্ডব। রাত হলেই কৃষকের ধান ও সবজি সাবাড় করে দিচ্ছে। হামলা চালাচ্ছে বাড়িঘরে। বন্যহাতিগুলো সারাদিন থাকে পাহাড়ের গহিন জঙ্গলে। সন্ধ্যা হলেই নেমে আসে লোকালয়ে আর সারা রাত চলে তান্ডব। বাধা দিতে গেলে শুরু হয় হাতি মানুষের যুদ্ধ। স্থানীয়রা জানিয়েছে ফসল বাঁচাতে সারারাত জেগে পাহাড়ি ও বাঙালি কৃষকরা পাহারা বসিয়েছে। আক্রমণের সময় ঢাকঢোল পিটিয়ে, পটকা ফুটিয়ে আর মশাল জ্বালিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না হাতির তান্ডব। এখন ওইসব গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ হাতি আতঙ্কে দিনরাত পার করছে। স্থানীয় আদিবাসী নেতা ব্রতীন মারাক ও প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেছেন, কৃষিনির্ভর পাহাড়ের মানুষের ভরসা এই ফসল। ফসল পাকলেই হাতির দল খেয়ে সাবার করছে। মাঝে মধ্যে বাড়ি ঘরেও হামলা করছে। এই পাহাড়ে ১৯৯৫ সাল থেকে বন্যহাতির আক্রমণে অন্তত ৭০ জন মানুষ মারা গেছে। আহত হয়েছেন শত শত মানুষ। ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকার জমির ফসল। হাতির তান্ডব থেকে মানুষ ও ফসল রক্ষা করতে সরকার ও এনজিও বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিল কিন্তু কিছুই কাজে আসে নাই। একযুগ আগে সোলার ফেনসিং (তারে সোলার বিদ্যুৎ প্রবাহ যা দিয়ে হাতি মারা যাবে না কিন্তু শক হবে। এই শকে হাতি পালাবে) নামক একটি ব্যয় বহুল প্রকল্প করা হয়েছিল সরকার থেকে। বছর খানেক কাজ করলেও পরে অযত্ন অবহেলায় সোলার ফেনসিং প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। হাতির উপদ্রপ থেকে বাঁচতে স্থায়ী সমাধানের দাবিতে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি হয়েছে অসংখ্যবার।

দেশি বিদেশি অসংখ্য গবেষকও কম আসেনি কিন্তু এই দ্ধন্ধ থামেনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বনকর্মকর্তা বলেছেন, হাতির প্রকৃতি হলো ওদের পূর্ব পুরুষ যে পথ দিয়ে চলাচলা করে থাকে পরের যত প্রজন্মও সেই পথে চলাচল করে। ওই পথ বাধাগ্রস্ত হলেই হাতির দল আক্রমণ ও নানা ক্ষতি করে। বনে মানব বসতি যত বাড়বে হাতির আক্রমণ ততই বাড়বে এটাই প্রকৃতি। এখানে নির্বিচারে বন দখল করে মানব বসতি গড়ে উঠছে যা প্রকৃতি বিরুদ্ধ। পাহাড়ে হাতির চলাচলের জায়গায় বাড়িঘর ও ফসল ফলানো হচ্ছে। ফলে হাতি মানুষের দ্ধন্ধ বাড়ছেই। তাছাড়া পাহাড়ে হাতির খাবার সংকট হওয়ার জন্যও ফসল ও মানুষের বাড়িঘরে হাতির আক্রমণ বাড়ছে। জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়বাসীকে সরকারি সহযোগিতা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। আরও যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তাদের জন্যও ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা বরাদ্দ করা হয়েছে। যে কোনো দুর্যোগে জেলা প্রশাসন ওদের পাশে থাকবে। স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে আপাতত হাতি তাড়ানোর কৌশল হিসেবে সোলার ফেনসিং প্রকল্পটি আবারও চালু করছে বন বিভাগ।

সর্বশেষ খবর