গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের জমি থেকে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে আগুন দেওয়াসহ তিনজন সাঁওতাল নিহত হন। ওই ঘটনার পাঁচ বছর পূর্তিতে ‘সাঁওতাল হত্যা দিবস’ শিরোনামে গতকাল গোবিন্দগঞ্জে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে উপজেলার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম কাটামোড় এলাকায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে নিহত তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার, অবিলম্বে আসামিদের গ্রেফতারসহ সাঁওতালদের রক্তভেজা তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড নির্মাণ বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। কর্মসূচির শুরুতে সাঁওতাল পল্লীর জয়পুর মাদারপুরে বসতি উচ্ছেদের জায়গায় স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে ও মোমবাতি জ্বালিয়ে সম্মান জানানো হয়।
নিহত মঙ্গল মার্ডি, রমেশ টুডু ও শ্যামল হেমব্রম স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
পরে পাঁচ শতাধিক সাঁওতাল-বাঙালি শোক র্যালিতে অংশ নেন। র্যালি শেষে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে তীর-ধনুক ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আদিবাসী সাঁওতালরা তাদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি তুলে ধরেন। সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ, উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম, এএলআরডি, কাপেং ফাউন্ডেশন, সিডিএ দিনাজপুর ও জনউদ্যোগ গাইবান্ধা যৌথভাবে এসব কর্মসূচির আয়োজন করে। সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ডা. ফিলিমন বাক্সের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, ভূমি অধিকার কর্মী ও এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, গাইবান্ধা জেলা বার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু, প্রাণবৈচিত্র্য গবেষক পাভেল পার্থ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সবিন চন্দ্র মু া, জনউদ্যোগ গাইবান্ধার সদস্য সচিব প্রবীর চক্রবর্তী, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম নেতা হরেন্দ্রনাথ সিং, কাপেং ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক খোকন সুইটেন মুরমু, আদিবাসী নেতা প্রিসিলা মুরমু, থমাস হেমব্রম প্রমুখ। বক্তারা সাঁওতাল হত্যার বিচার, আসামিদের গ্রেফতার ও সাঁওতালদের রক্তভেজা তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, যে কোনো এলাকার উন্নয়নে ইপিজেড স্থাপন সেই এলাকার মানুষের জন্য অবশ্যই সুখের খবর। কিন্তু সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের আদিবাসী ও বাঙালিদের বাপ-দাদার জমিতে সেখানকার ওয়ারিশদের সম্মতি ছাড়াই ইপিজেড স্থাপনের ঘোষণা আদিবাসী-বাঙালি জনগণকে হতাশ করেছে। তারা অবিলম্বে তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড স্থাপনের প্রক্রিয়া বন্ধ, সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সংকট নিরসনে পৃথক ও স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠনসহ সাত দফা বাস্তবায়নের দাবি করেন।