বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

যমুনার চরে মরিচ রাজ্য

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

যমুনার চরে মরিচ রাজ্য

বগুড়া সারিয়াকান্দির যমুনার চরে মরিচ রাজ্য গড়ে উঠেছে।  উপজেলার শতাধিক চাষি নানা ধরনের মরিচসহ সবজি চাষের কারণে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছেন। দীর্ঘদিন বন্যার পানিতে নিমজ্জিত থাকা চরগুলোতে পলি পড়ে উর্বর হয়ে ওঠা যমুনা নদীর চরে চাষ হচ্ছে গাইঞ্জা ধান, মুলা, পিঁয়াজ, শাক, লাউসহ নানা ধরনের সবজি। চাষের পর ফলন নিয়ে যমুনা নদীর চরের কৃষকরা চাষ এবং বাজারজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চরে এবার সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে হাইব্রিড মরিচ। দীর্ঘ সময় ধরে ফলন দেয় এবং বাজারে সারা বছর চাহিদা থাকায় এই জাতের মরিচ চাষ করে লাভবান হচ্ছে চাষিরা। সারিয়াকান্দি উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের জোড়গাছা গ্রামের সুলতান আলী জানান, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শফিউল আলমের পরামর্শে গত বছর চরের প্রায় ২২ শতক জমিতে চাষের পর থেকে ২ লাখ ১৬ হাজার টাকার হাইব্রিড মরিচ বিক্রি করেন। এ বছর ওই জমিসহ সর্বমোট ৬২ শতক জমিতে হাইব্রিড মরিচ চাষ করেছেন। এর মধ্যে ২২ শতকের জমি থেকে প্রথম তোলায় ৪ মণ, দ্বিতীয় তোলায় ৬ মণ এবং তৃতীয় তোলায় ১৩ মণ মরিচ পাওয়া গেছে। ৪০ শতকের জমি থেকে প্রথম তোলায় ৭ মণ, দ্বিতীয় তোলায় ১২ মণ এবং তৃতীয় তোলায় ১৮ মণ মরিচ তিনি পেয়েছেন। প্রায় ১১ থেকে ১২ দিন পরপর জমি থেকে মরিচ তুলে থাকেন। ফুলবাড়ী হাটে সাদা মরিচ ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ এবং কালো মরিচ ৩ হাজার ২৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। ৬২ শতক জমিতে মরিচ চাষে ৬৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত বিক্রি করেছেন ১ লাখ ২২ হাজার টাকা। পৌষ মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জমি থেকে মরিচ উত্তোলন করা যাবে। উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের জামথল চরের মরিচ চাষি জবেদ আলী জানান, তিনি এ বছর ১৮ বিঘা জমিতে হাইব্রিড মরিচের চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত ৭ মণ মরিচ বিক্রি করেছেন। প্রতি কেজি ৬০ টাকা করে বিক্রি করেছেন। তিনি আশা করছেন আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জমি থেকে মরিচ তুলতে পারবেন। গত বছর প্রতি বিঘাতে তার মরিচ চাষে খরচ হয়েছিল ৪০ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘায় তার মরিচ গড়ে বিক্রি হয়েছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চরের জমিতে পলি পড়ে চাষের উপযোগী হয়ে যায় জমিগুলো। উপজেলার সব এলাকাতেই মরিচ চাষ হলেও চরাঞ্চলগুলোতে অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে হয়। চরাঞ্চলগুলোর মধ্যে চালুয়াবাড়ী, হাটবাড়ী, ফাজিলপুর, তেলীগাড়ী, গওলাডাঙ্গা, মানিকদাইড়, আউচারপাড়া, কাকালিহাটা, সবুজের পাড়া, চকরথিনাথ, দিঘাপাড়া, করণজাপাড়া, বনরপাড়া, কাজলা, জামথল, পাকুরিয়া, উত্তর টেংরাকুরা, চরঘাগুয়া, নব্বইয়ের চর, কটাপুর, বেড়া পাঁচবাড়িয়া, কুড়িপাড়া, বাওইটোনা, উত্তর বেনিপুর, দক্ষিণ বেনিপুর, চরবাটিয়া, চিলাপাড়া, চরপাড়া, মথুরাপাড়া, ইন্দুরমারা, ডাকাত মারা, মূলবাড়ী, ধারাবর্ষা, শংকরপুর, কমরপুর, মাঝবাড়ী, মাঝিয়া, হাতিয়াবাড়ী এবং পৌতিবাড়ী চরে হাইব্রিড মরিচের গাছগুলো সতেজভাবে বেড়ে উঠছে, ফুল এসেছে এবং মরিচ ধরেছে। গত বছরে হাইব্রিড মরিচের ফলন হয়েছিল প্রতি হেক্টরে শুকনা আকারে ২.৪ মেট্রিক টন। সারিয়াকান্দি চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের হাটবাড়ী চরের মরিচ চাষি ইসমাইল হোসেন জানান, গত বছর এক বিঘা জমি থেকে মরিচ চাষ করে ৩৫ হাজার টাকা আয় করতে পেরেছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর