মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ভোগান্তিতে ১০ গ্রামের ২০ হাজার মানুষ

আমতলী প্রতিনিধি

ভোগান্তিতে ১০ গ্রামের ২০ হাজার মানুষ

ভাসমান সেতু ভেঙে নদীতে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আমতলীর চাওড়া নদীর মহিষডাঙ্গা এলাকার ভাসমান সেতু আবার ভেঙে পড়েছে। রবিবার রাতে একটি মোটরসাইকেল পারাপারের সময় এ সেতু ভেঙে পড়ে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ ১০ গ্রামের ২০ হাজার মানুষ। দ্রুত গার্ডার সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।  জানা গেছে, আমতলী সদর ও চাওড়া ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে বদ্ধ চাওড়া খালে দুই ইউনিয়নের সংযোগ স্থাপনে মহিষডাঙ্গা গ্রামের ঠিকাদার শামীম আহসান মালাকার বাড়ির সামনে ২০০৬ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর আয়রন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ১ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্‌বান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। ওই সেতুর কাজ পায় বশির উদ্দিন সিকদার নামের এক ঠিকাদার। কিন্তু ওই ঠিকাদার শামীম আহসান মালাকারের খালুশ্বশুর হওয়ায় কাজটি তিনি করেন। ঠিকাদারের বাড়ির সামনে সেতু নির্মাণে স্থানীয় প্রকৌশল অফিসের কোনো তদারকি ছিল না। ঠিকাদার নিজের ইচ্ছামতো নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ করেছেন এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। কার্যাদেশে ইআই পোস্ট দেওয়ার কথা থাকলেও   ঠিকাদার স্থানীয়ভাবে লোহার প্লেট দিয়ে ফাপা পোস্ট তৈরি করে ব্রিজ নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়া নিম্নমানের লোহার বিম সেতু নির্মাণে ব্যবহার করেছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন পোস্ট যতটুকু গভীরতা দেওয়া কথা তা দেয়নি ঠিকাদার শামিম। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে সেতুর কাজের শুরুতেই স্থানীয়রা বাঁধা দেয়। কিন্তু এতে ঠিকাদারের তোপের মুখে পড়েন তারা, এমন অভিযোগ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয়দের। নির্মাণের তিন বছরের মাথায় ২০০৯ ওই সেতুর মাঝখান দেবে যায়। সেতু দেবে যাওয়ার বিষয়টি তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী মো. আতিয়ার রহমানকে স্থানীয়রা জানালেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেনি। ওই সময়ে ঠিকাদার শামীম আহসান দেবে যাওয়া সেতু রক্ষায় সেতুর সামনে পিলার পুঁতে দেন, যাতে বড় কোনো যানবাহন ওই সেতুতে উঠতে না পারে। গত ১৫ বছরে ছোট যানবাহন ও মানুষ ছাড়া কিছুই ওই ব্রিজে উঠতে পারেনি বলে জানান স্থানীয় অলিল খান ও মাহাদী হাসান। ওই সেতুটি গত জুন মাসে ভেঙে পড়ে। গত জুন মাসে ওই ভাঙা সেতুতে ভাসমান সেতু নির্মাণ  করে স্থানীয়রা। গত পাঁচ মাস ধরে ওই ভাসমান সেতু দিয়ে মানুষ পারাপার হতো। কিন্তু বরিবার রাতে একটি মোটরসাইকেল পার করতে গিয়ে সেতু ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। ওই সেতু ভেঙে পরায় আমতলী সদর ইউনিয়নের ভায়লাবুনিয়া, মহিষডাঙ্গা, পূর্ব মহিষডাঙ্গা, নাচনাপাড়া, হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া, তুজির বাজার ও চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া, চলাভাঙা ও লোদা গ্রামের অন্তত ২০ হাজার  মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। ওই সেতু দিয়ে চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাউনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহিষডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব মহিষডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শামিম আহসান দাখিল মাদরাসা, নুরানি মাদরাসা, ইব্রাহিমিয়া হাফিজি মাদরাসার শিক্ষার্থী এবং কাউনিয়া আশের্^দিয়া বায়তুল আমান জামে মসজিদের মুসল্লিদের পারাপার বন্ধ হয়ে গেছে। দুই ইউনিয়নের মানুষের মেলবন্ধনে সেতুটি নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

মহিষডাঙ্গা গ্রামের রুহুল আমিন ও সুমন মল্লিক বলেন, চিৎকারের শব্দ শুনে সেতুতে এসে দেখি সেতু ভেঙে মোটরসাইকেল নদীতে পড়ে গেছে। সেতু ভেঙে পরায় আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ ১০ গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। দ্রুত ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান তারা। কাউনিয়া গ্রামের হেলাল মিয়া বলেন, সেতু ভাইঙ্যা পড়ায় মোরা ভোগান্তিতে পড়েছি। এহন এপারের মানু ওপাড়ে যাইতে পারমু না। কাউনিয়া গ্রামের শাফিয়া বেগম বলেন, ‘সেতুডা ভাইঙ্যা পইড়্যা মোগো এহন আর ভোগান্তির শ্যাষ নাই। মুই হহালে ব্রিজ নির্র্মাণের দাবি হরি। কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোসা. শাহনাজ পারভীন বলেন, ওই সেতু পার হয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসে। ব্রিজ ভেঙে পড়ায় শিক্ষার্থীদের বেশ অসুবিধা হয়েছে। দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি। আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, আমতলী ও চাওড়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী চাওড়া খালের মহিষডাঙ্গা ও কাউনিয়া গ্রামের সংযোগ সেতু ভেঙে পড়ায় আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দুই ইউনিয়নের ১০ গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। সেতু নির্মাণ করা না হলে মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকবে না। দ্রুত সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন। ঠিকাদার আলহাজ শামীম আহসান মালাকার সেতু নির্মাণে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহারের কথা অস্বীকার করে বলেন, সঠিক নিয়মে ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঠিকাদার বশির উদ্দিন সিকদার ব্রিজ নির্মাণ করেছেন। ঠিকাদার মো. বশির উদ্দিন শিকদার বলেন, ওই সেতুটির কাজটি আমি করিনি। করেছে শামীম আহসান। আমতলী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, দ্রুত ওই সেতু নির্মাণের জন্য বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী দফতরে প্রকল্প দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর